আজ মিতু স্কুল থেকে পিকনিকে যাচ্ছে। মিতুর কেমন জানি একটু ভয় লাগছে এই প্রথম ও একা পিকনিক এ যাচ্ছে। কি হবে ওইখানে? অন্য সব ছেলে মেয়েরা ওর সাথে খেলবে তো। না খেললে মিতু একা একা কি করবে? এই ভাবে মিতু খুব ভয় পাচ্ছে। মিতুর তো আবার টনসিলের ব্যাথা, গরম পানি ছাড়া ঠাণ্ডা এমন কি নরমাল পানি পর্যন্ত খেতে পারে না ? পিকনিকে গরম পানি মিতু কোথায় পাবে !
মনের মধ্যে এত দ্বিধা থাকার পরও মিতু পিকনিকে গেলো। পিকনিক নিয়ে মিতু যতটা চিন্তায় ছিল তার কিছুই হল না বরং সবাই মিতুর সাথে কথা বললো ও সবাই একসাথে খেললো। পিকনিকে সবার সাথে খেলাধুলা শেষ করে এবার খাওয়ার পালা। যে বিষয়টাকে নিয়ে মিতু সব চাইতে বেশী ভয় পাচ্ছিলো তা হচ্ছে খাওয়ার পর পানি খাওয়া নিয়ে। ঠাণ্ডা পানি খেলেই তো টনসিলটা টনটন করে ফুলে উঠবে !
‘মা কি একটা ফ্লাক্সে পানি দিয়েছে, নিশ্চয়ই পানি এতোক্ষণে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে’
‘কি আর করার এই পানি যে এখন খেতে হবে’
পানি মুখে দিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য মিতু চুপ।
“একি করে সম্ভব, পানি তো এখনও গরম, কি করে হল ব্যাপারটা”
“কি রে মিতু কি হয়েছে আবার” প্রশ্ন করলো রানু
“ফ্লাক্সের মধ্যে মা গরম পানি দিয়েছিল, সেই পানি এখন ও গরম আছে”
“তাই তো স্বাভাবিক রে মিতু এত অবাক কেন তুই”
“কেন এমন হয় রানু”
“সত্যি তুই জানিস না!”অবাক হয়ে উত্তর দিলো রানু
“না” মুখ গম্ভীর মিতুর
“শোন এই ফ্লাক্সটাকে বলে থার্মোফ্লাস্ক ”
“আবার ভ্যাকুয়াম বোতল ও বলে, এর মধ্যে দিয়ে তাপ চলাচল করে পারে না তাই পানি অনেক সময় পযন্ত গরম থাকে”
“কেন করে না তাপ চলাচল?”
“তা তো জানি না। চল আশিক স্যারকে (আশিক স্যার তাদের বিজ্ঞান শিক্ষক) জিজ্ঞাসা করি”
“আচ্ছা চল”
মিতু আর রানুকে ছুটতে দেখে সাথি ওদের জিজ্ঞাসা করলো, “কি ব্যাপার তোরা কোথায় যাচ্ছিস”
“এই তো আপু আমরা আশিক স্যারের কাছে যাচ্ছি”
“কেন কি হয়েছে”
“থার্মোফ্লাস্ক কিভাবে কাজ করে তা জানার জন্য”
“এই ব্যাপার তোমরা আমার কাছে আসতে”
“তুমি জানো আপু?”
“হ্যাঁ জানি,এইটা তো আমাদের বিজ্ঞান বইয়ে আছে”
“তাহলে বলো না আপু কি কারণে এমন হয়”
“রুপার প্রলেপের কারণে”
“রুপার প্রলেপ” একসাথে বলে উঠলো মিতু আর রানু।
“ হ্যাঁ রুপার প্রলেপ,থার্মোফ্লাস্কের ভিতরে রুপার প্রলেপ থাকে ফলে এর ভিতরের তাপ বাহিরে যেতে পারে না আর বাহির থেকে কোন তাপ ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না ফলে এর মধ্যে আমরা গরম পানি কিংবা চা যাই রাখি না কেন এইগুলো দীর্ঘ সময় পযন্ত গরম থাকবে”
“তুমি যদি ঠাণ্ডা পানি রাখো তাহলে ঠাণ্ডা পানিও অনেক সময় পযন্ত ঠাণ্ডা থাকবে” “সত্যি আপু” মিতু অবাক হয়ে বললো। “হ্যাঁ সত্যি”
থার্মোফ্লাস্ক এর ঘটনা উন্মোচন করে মিতু অনেক খুশি হল, এবং এর চাইতে ও বেশী খুশি হল কারণ মিতুকে এখন ঠাণ্ডা পানি খেয়ে টনসিল বাড়াতে হবে না বাসা থেকে আনা গরম পানি মিতু খেতে পারবে।