খেলাধুলা আমাদের জীবনের একটি বড় জায়গা জুড়ে আছে। পৃথিবীর হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক রকম খেলা তৈরি হয়েছে, আবার বিলুপ্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি অনুসারে একেক দেশে একেক খেলা জনপ্রিয়। আমাদের দেশে যেমন ক্রিকেট আর ফুটবল, পশ্চিমা বিশ্বে ফুটবলের পাশাপাশি রাগবি আর বাস্কেটবল একটা বড় জায়গা দখল করে আছে। এছাড়াও টেনিস প্রায় সব দেশেই কমবেশী খেলা হয়। এই টেনিসের আদলেই একটি খেলার প্রচলন রয়েছে যা হয়তো সব দেশে এখনও তেমনভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি, কিন্তু ধীরে ধীরে ঠিকই তার স্থান তৈরি করে যাচ্ছে, আর এই খেলাটি হল স্কোয়াশ। স্কোয়াশ খেলার জন্ম হয় আনুমানিক ১৮৩০ সালে লন্ডনে। এই খেলার নীতিনির্ধারণের জন্য রয়েছে বিশ্ব স্কোয়াশ ফেডারেশন।
টেনিস এবং ব্যাডমিন্টন খেলায় যে ধরণের ব্যাট ব্যবহার করা হয়, এদের র্যাকেট বলে। তবে দুই খেলায় দুই ধরণের র্যাকেট ব্যবহার করা হয়। স্কোয়াশ খেলাতেও এমন এক ধরণেরই র্যাকেট ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে এই র্যাকেটগুলো গ্রাফাইট, কেভলার, টাইটেনিয়াম, বা বোরন দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে এবং স্ট্রিংগুলো তৈরি হয় সিনথেটিক দিয়ে। র্যাকেটগুলো ২৭ ইঞ্চি লম্বা এবং ৮.৫ ইঞ্চি চওড়া হয়ে থাকে, আর এর ওজন হয় ৯০-১৫০ গ্রামের মধ্যে।
স্কোয়াশ খেলার বলটি রাবারের তৈরি হয়, ৩৯.৫-৪০.৫ মিঃ মিঃ ব্যাসার্ধের বলগুলোর ওজন হয় ২৩-২৫ গ্রাম। স্কোয়াশ খেলার বলগুলো নিয়ে মজার একটা ব্যাপার আছে। এই বলগুলো কালো রঙের হলেও একেক বলে একেক রকম ফোঁটা বা ডট দেয়া থাকে। ডটগুলো নীল, সাদা অথবা লাল, এবং হলুদ রঙের হয়, কিন্তু আরেক ধরণের ডট ব্যবহার করা হয় যেটা Double Yellow নামে পরিচিত, অর্থাৎ এতে হলুদ ডট দুটি দেয়া থাকে। নীল ডটের বলগুলো শিক্ষানবিশ খেলোয়াড়দের জন্য ব্যবহার হয়, এগুলো বেশ দ্রুত গতির এবং এদের বাউন্স বেশী হয়ে থাকে। মাঝামাঝি পর্যায়ের খেলোয়াড়দের জন্য ব্যবহার হয় সাদা অথবা লাল ডটের বল, তার চেয়ে বেশী অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের জন্য হলুদ ডটের বল এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের খেলোয়াড়দের জন্য দুটি হলুদ ডটের বল ব্যবহার করা হয়।
স্বচ্ছ কাচের চার-দেয়ালবিশিষ্ট ইনডোর কোর্টে দুইজন বা চারজন খেলোয়াড় র্যাকেট ও বল নিয়ে একে-অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকেন এই খেলায়। স্কোয়াশ খেলাটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সম্মুখের দেয়ালে বলকে আঘাত করার মাধ্যমে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে পাশ কাটিয়ে মেঝেতে দুইবার স্পর্শ করানো অথবা বলকে খেলার বাইরে নিয়ে যাওয়া। এই খেলার কোর্টটি চারটি দেয়াল দিয়ে ঘেরা থাকে। সামনের দেয়ালে তিনটি দাগ কাটা থাকে, সবচেয়ে উপরের দাগটিকে বলে আউট লাইন, এর নিচেরটিকে সার্ভিস লাইন, এবং তার নিচের আধা মিটার প্রস্থের জায়গাটিকে বলে টিন। খেলোয়াড়রা পাশাপাশিই দাঁড়িয়ে থাকেন। সার্ভিস করার সময় বলটিকে এমনভাবে মারতে হয় যেন তা সার্ভিস লাইন এবং আউট লাইনের মাঝামাঝি স্থানে আঘাত করে ফিরে আসে, কিন্তু সার্ভিস করার পর থেকে তাঁদের লক্ষ্য থাকে বলটিকে টিন এবং আউট লাইনের মাঝামাঝি স্থানে আঘাত করে ফিরিয়ে আনা। কারণ টিন বা আউট লাইনের বাইরে বল আঘাত করলে তা আউট বলে গণ্য হয়। বল র্যাকেটে আঘাত করার পর তা সরাসরি সামনের দেয়ালে গিয়ে আঘাত করতে হবে, এর মাঝখানে বল যদি মাটিতে বা পাশের কোন দেয়ালে আঘাত করে, তবে তা আউট হবে। সামনের দেয়ালে আঘাত করার পর বল মাটিতে বা পাশের দেয়াল স্পর্শ করতে পারবে। কোন খেলোয়াড় তাঁর প্রতিপক্ষকে বল মারার সময় কোন প্রকার বাধা প্রদান করতে পারবেন না। প্রত্যেক পয়েন্টের পর খেলোয়াড়রা জায়গা পরিবর্তন করেন। শুরুতে এই খেলার মোট পয়েন্ট ৮ থাকলেও এখন ১১ পয়েন্টে খেলা হয়। অর্থাৎ যেই খেলোয়াড় আগে ১১ পয়েন্ট অর্জন করতে পারবেন, তিনিই জয়ী বলে গণ্য হবেন।
এই খেলাটি পশ্চিমা বিশ্বেই বেশী প্রচলিত হয়ে থাকলেও এর বাইরে অনেক দেশেই স্কোয়াশ খেলা হয়। বর্তমানে আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে স্কোয়াশ খেলার প্রচলন হচ্ছে। ১৯৯৮ সালের পর থেকে কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমসে স্কোয়াশ খেলাটি নিয়মিত হয়ে আসছে। তবে স্কোয়াশের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ। পাকিস্তানের জাহাঙ্গীর খানকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ স্কোয়াশ খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর মেয়েদের স্কোয়াশের বড় নাম মালয়েশিয়ার নিকোল ডেভিড। প্রফেশনাল স্কোয়াশ সংস্থার ঘোষিত র্যাঙ্কিং অনুযায়ী (মে,২০১৬) বর্তমানে পুরুষ বিভাগের এক নম্বরে আছে মিশরের স্কোয়াশ খেলোয়াড় মোহম্মদ আল সার্বাজি ও প্রমিলা বিভাগে এক নম্বরে আছে সার্বাজিরই স্বদেশী নূর আল সারবানি।