১৯৭৫ সালে ম্যানিলার সেই বিখ্যাত ম্যাচ। বক্সিং চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ আলির মুখোমুখি তার চিরশত্রু জো ফ্রাজিয়ের। ম্যাচ জমে উঠেছে, ১১তম রাউন্ডের সময় দুই বক্সারই প্রায় সমান সমান। জো এর কর্নারম্যান এডি ফাচ লক্ষ্য করলেন যে আলির ডান হাতের বেশ কিছু পাঞ্চ ব্লক করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তার বক্সার জো। রাউন্ড শেষে রিং এর কোনায় জোকে বরফ দিতে দিতে ফাচ জিজ্ঞাসা করলেন, “ ডানহাতের ব্যাপারটা কি ?” জো স্বীকার করলেন যে আলির ডান হাতের কয়েকটা পাঞ্চ তিনি দেখতেই পাননি। ফাচ চিন্তায় পড়ে গেলেন, কারণ তার জানা আছে যে, এক দুর্ঘটনার পর থেকে বাম চোখে প্রায় দেখতেই পাননা জো। বাম চোখের সেই দুর্বলতার জন্যই আলির ঘুসিগুলো দেখতে পাচ্ছেন না জো। তাই দ্রুত চিন্তা করে জোকে একটি পরামর্শ দেন তিনি–পরের রাউন্ডে আলির সামনে আরো সোজা হয়ে দাঁড়াতে যাতে আলির ঘুসি আগে থেকেই দেখতে পারেন জো।
কর্নারম্যানের পরামর্শ অনুযায়ী এবার আলির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ালেন জো, যার ফলাফল হলো আরো খারাপ। আলির লম্বা হাতের পাঞ্চে নাকাল হতে থাকলেন তিনি। ১২তম রাউন্ড শেষে জো এর চোখের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়।
১৪তম রাউন্ডের ফলাফলের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখেন জো এর কর্নারম্যান ফাচ। দুই বক্সারই সহ্যের শেষ সীমায় চলে গিয়েছিল, তবে জো এর অবস্থা ফাচকে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলে। পোড় খাওয়া ফাচ নিজের চোখে ৭জন বক্সারকে রিংয়ে মৃত্যুবরণ করতে দেখেছেন, আর জো এর অবস্থাও তার কাছে সুবিধার ঠেকছে না। এই ম্যাচ শুধু ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপের নয়, এটা এক মর্যাদা রক্ষারও লড়াই। তারপরে ও মানুষের জীবন টাইটেলের চেয়ে অনেক অনেক দামী।
তাই, ১৪তম রাউন্ড শেষে ফাচ রিং এ তোয়ালে নিক্ষেপ করলো অর্থাৎ রেফারিকে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার সিগন্যাল দিলেন। বক্সিং খেলা চলাকালীন সময়ে রিং এ বক্সারের ট্রেনার বা কর্নারম্যান যখন তোয়ালে নিক্ষেপ করেন তখন ঐ বক্সারের পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য করা হয়। ফলে, জো ফ্রাজিয়েরের সাথে ম্যাচ জিতে ইতিহাসে স্থান করে নিলেন মোহাম্মাদ আলি।
না, ইতিহাসে শুধু আলি বা জো’দেরই স্থান হয়নি–স্থান হয়েছে তাদের কর্নারম্যান ও ট্রেনার হার্বারট মোহাম্মদ ও ফাচ’দেরও।
বক্সিং ম্যাচে প্লেয়ারদের কোচ বা সহযোগীদেরকেই বলা হয় কর্নারম্যান। এই কর্নারম্যানরা ম্যাচের সময় রিংয়ের বাইরে থাকেন, তবে বক্সারদেরকে বিভিন্ন টিপস দিতে পারেন তারা। এই টিপসগুলোই ম্যাচের ভাগ্য পাল্টে দিতে পারে।
শুধু টিপসই নয়, ম্যাচ চলাকালে বক্সারের একমাত্র বন্ধু এই কর্নারম্যান। প্রত্যেক রাউন্ড শেষে এক মিনিটের মধ্যে বক্সারের ক্ষতস্থানে বরফ দেওয়া, লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহমূলক কথা বলা এমনকি তোয়ালে এগিয়ে দেওয়া কত কিছুই না করতে হয় তাকে ! ম্যাচ চলাকালেও বসে থাকার উপায় নেই – তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হয় প্রতিপক্ষের উপর আর বের করতে হয় তার দুর্বলতা। গোটা ম্যাচের মস্তিস্ক হিসাবে যেন কাজ করে এই কর্নারম্যানরা।
আর খেলার সময়ে কোন বক্সারের পরিণতি যদি একেবারেই ভয়াবহ অবস্থায় রূপ নেয় তখন রিং এ তোয়ালে নিক্ষেপ করে বক্সারকে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য করে এই কর্নারম্যানরা। জর্জ বেন্টন, এডি ফাচ, আঙ্গেলো ডান্ডি, ম্যানি স্টুয়ার্টসহ অনেক কর্নারম্যান তাদের দক্ষতা দিয়ে স্থান করে নিয়েছেন ইতিহাসে।