বৈদ্যুতিক চুলা

আজকাল নিত্য নৈমিত্তিক রান্নাবান্নার কাজে মাইক্রোওভেন বেশ প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্র হয়ে উঠেছে৷দিনদিন বাংলাদেশে এর ব্যবহারও বাড়ছে৷

আজকাল নতুন ধরনের মাইক্রোওয়েভ ওভেন বাজারে এসেছে যা দিয়ে শুধুমাত্র খাবার গরম করাই নয়, খাবার তৈরীও করা যায়।সামনে হয়ত এমন ও দিন আসবে, যখন মাত্র এক মিনিটে ওভেন দিয়ে তৈরী করে ফেলতে পারবেন পোলাও, কোরমা জাতীয় খাবার৷ 

মাইক্রোওভেন এ আসলে মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের এর মাধ্যমে খাবার গরম করা হয়। সাধারণত 2500 মেগা হার্জ বা 2.5 গিগা হার্জ এর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় এসব যন্ত্রে। এই কম্পাঙ্কের তরঙ্গের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। তা হল এই কম্পাঙ্কের তরঙ্গ কেবলমাত্র পানি, চর্বি এবং চিনি জাতীয় বস্তু দ্বারা শোষিত হয়। আর শোষিত হওয়া মাত্রই তরঙ্গটি আনবিক তাপ গতিতে পরিণত হয় এবং বস্তুটিকে গরম করে।

এই যন্ত্রে মাইক্রোওয়েভ বা অতি ক্ষুদ্র কম্পাঙ্কের তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে খাদ্যবস্ত্তকে উত্তপ্ত করা হয়। এটি মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ ব্যবহার করে খাদ্যবস্তুরর অভ্যন্তরীণ পোলারাইজড (polarized) অণুগুলোকে উত্তপ্ত করে, ফলে সম্পূর্ণ খাদ্যবস্তুটি গরম বা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়ায় ঘন বা বেশী জলীয় উপাদান বিশিষ্ট খাদ্যের বাইরের দিক পর্যন্ত সুষমভাবে গরম হয়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই মাইক্রোওয়েভ ওভেন আবিষ্কার ছিলো একটি দুর্ঘটনা। ১৯৪৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকান বিজ্ঞানী পার্সি স্প্যান্সার ( Percy Spencer ) বেতার তরঙ্গ এবং রাডার নিয়ে গবেষণার মাঝে হঠাৎই মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর ধারণা পান। তিনি কাজ করার সময় তার পকেটে একটি চকলেটের বার ছিলো। কিছুক্ষণ পরে তিনি দেখতে পারলেন তার চকলেটের বারটি গলে গেছে। পরবর্তীতে পার্সি স্প্যান্সার আবিষ্কার করলেন যে বেতার তরঙ্গ থেকে তাপ বিকিরণের কারণে চকলেটের বারটি গলে গেছে।     

কিভাবে কাজ করে এই মাইক্রোওয়েভ ওভেন ?

সাধারণ ওভেনে যেখানে খাবারকে আস্তে আস্তে গরম করা হয়, সেখানে মাইক্রোওয়েভ ওভেন দিয়ে খুব দ্রুত খাবার গরম করা হয়। মাইক্রোওয়েভ ওভেন খুব দ্রুত পরিবর্তনশীল তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্র ( Electromagnetic Field ) তৈরি করতে পারে। চার্জ বা আধানের প্রভাবে কোন বস্তু যখন তার চারপাশে একটি তড়িৎ বলয় তৈরি করে তখন ঐ বলয়কে আমরা তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্র বলে থাকি। মাইক্রোওয়েভ ওভেন দিয়ে যে খাবার গরম করা হয় তার মধ্যে পানির অংশ থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।পানির অণুতে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক অংশ থাকে৷মাইক্রোওয়েভ ওভেনের এই তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্র পানির কণাগুলিকে খুব দ্রুত দিক পরিবর্তন করতে থাকে। এত দ্রুত পানির কণাগুলি দিক পরিবর্তন করে বলে এতে তাপশক্তি উৎপন্ন হয় এবং সেই শক্তি দিয়ে খাবার গরম হয়৷তাই যে সমস্ত খাবারে খুব কম পানি থাকে তা তুলনামূলকভাবে কম গরম হয়৷

সিরামিক, গ্লাস এবং অধিকাংশ প্লাস্টিক মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ শোষণ করতে পারে না আর এই জন্যই ওভেনে পাত্র গরম হয় না এবং শক্তিরও অপচয় হয় না।মাইক্রোওভেনে কখনও ধাতব পাত্র ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি বলা হয়ে থাকে কারণ ধাতব পাত্র মাইক্রোওয়েভকে প্রতিফলিত করে এবং খাবার গরম হতে বাধা দেয়। ওভেনে পাতলা গ্লাস ব্যবহার করা উচিত নয় কেননা পাতলা গ্লাস তাপে ফেটে যায়। তাই, পুরু গ্লাস ব্যবহার করায় উত্তম।   

 

মাইক্রোওয়েভ ওভেনকে এর কার্যপদ্ধতি অনুযায়ী ৩ভাগে ভাগ করা হয়। 

Convection মাইক্রোওয়েভওভেন:

এর মূল দিক হচ্ছে এতে একটি ফ্যান এবং তাপ প্রদানের উপাদান থাকে যা ওভেনের ভেতরে একটি বাতাস প্রবাহের একটি ধারা তৈরি করে।বাতাস প্রবাহ অতি দ্রুত রান্নাকে বাধা প্রদান করে এবং খাবারের সমগ্র অংশে তাপ প্রদানের নিশ্চয়তা প্রদান করে।

এই প্রকারের ওভেন বেকিং এবং খাবার তরতাজা রাখার জন্য উত্তম।

Grill মাইক্রোওয়েভ ওভেন:

এই ধরনের মাইক্রোওয়েভ ওভেন মূলত খাবারকে বাইরে দিয়ে মচমচে এবং ভিতর দিয়ে রসালো রাখার কাজে ব্যবহার করা হয়।

কাবাব, পরোটা, টিক্কা ইত্যাদি জাতীয় খাবার তৈরির জন্য এই ধরণের ওভেন উত্তম।

Solo মাইক্রোওয়েভওভেন:

এটি ব্যবহার করা যায় অনেকটা বেসিক ওভেন হিসেবে। এটি খুব দ্রুততর সময়ে খাবারকে গরম করা এবং বরফ জমা খাবার পাতলা করার কাজে ব্যবহার করা যায়।

এটি উত্তম হচ্ছে বেকিং, পুনরায় তাপ প্রদান,বরফ জমা খাবার পাতলাকরণ ইত্যাদি কাজের জন্য।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন