মজা করে বাসায় টিভিতে কার্টুন দেখছো, হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলো। ভীষণ রাগ ওঠে, তাই না? হয়তো কিছুক্ষণ পরে চলেও আসলো। কখনো ভেবেছো যে, এই বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া কোথায় থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়? বিদ্যুৎ আসেই বা কোথা থেকে? যেখান থেকে বিদ্যুতের সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাকে পাওয়ার হাউজ বা শক্তিঘর বলে। এই বিদ্যুতের শক্তিঘরের মতো তোমার শরীরেও যে শক্তিঘর আছে তা জানো? মানুষের শরীরের যে অংশ শক্তি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করে, সেটি মাইটোকন্ড্রিয়া (Mitochondrion) নামে পরিচিত।
মানবদেহের সকল কোষের যাবতীয় কাজ সম্পাদনের জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয়, তার সবটুকুই থাকে মাইটোকন্ড্রিয়াতে। প্রত্যেক কোষে এদের সংখ্যা ২০০-৩০০। ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী অল্টম্যান সর্বপ্রথম কোষের মধ্যে এর উপস্থিতি দেখতে পান, এবং ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে সি.বেন্দা এর নামকরণ করেন। একজন আবিস্কার করলেন, আর ৪ বছর পর অন্য একজন নামকরণ করলেন, ব্যাপারটা কিন্তু বেশ মজার!
গঠনঃ
মাইটোকন্ড্রিয়া বিভিন্ন আকারের হতে পারে- দন্ডাকার, সূত্রাকার, গোলাকার বা আংটির মতো। কোষের শারীরবৃত্তীয় কাজের সাথে এদের আকারের পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ, শক্তি উৎপাদনের জন্য যখন যে আকার প্রয়োজন, তখন সেই আকার ধারণ করতে পারে। মাইটোকন্ড্রিয়ার দেহ প্রোটিন এবং লিপিড নির্মিত দুটি একক আবরণী দিয়ে বেষ্টিত। বাইরের আবরণীটি বহিঃআবরণী (Outer Membrane ) ও ভেতরের আবরণীটি অন্তঃআবরণী ( Inner Membrane ) নামে পরিচিত। দুটি পর্দার মাঝের স্থানটিকে পেরিমাইটোকন্ড্রিয়াল স্পেস বলে। অন্তঃআবরণী ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে যে প্রাচীর সৃষ্টি করে, তাকে ক্রিস্টি ( Cristae ) বলে। ক্রিস্টির ভাঁজে ভাঁজে ম্যাট্রিক্স ( Matrix ) নামক অংশ থাকে, যার কাজ হলো শক্তি উৎপাদনে সহায়ক কিছু অর্ধ-তরল পদার্থ ধারণ করা। প্রতিটি ম্যাট্রিক্সে ৩-৫টি ডিএনএ ( DNA ) বিদ্যমান, যাদেরকে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বলে।
কাজঃ
মাইটোকন্ড্রিয়াতে খাদ্য থেকে নির্গত শক্তি জমা থাকে বলে একে শক্তিঘর বলে। চর্বি থেকে তাপ ও শক্তি উৎপাদনে মাইটোকন্ড্রিয়া ভূমিকা রাখে। এছাড়া এরা কিছুসংখ্যক আরএনএ ( RNA )ও ডিএনএ উৎপাদন করে। কোষ বিভাজনের মাধ্যমে কোষের সংখ্যাবৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে মাইটোকন্ড্রিয়া সহায়তা করে। শুধু মানবদেহে নয়, উদ্ভিদের দেহে সবাত শ্বসনের ( Aerobic Respiration ) ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট, চেইন রিএকশন ( Chain Reaction ) মাইটোকন্ড্রিয়াতেই ঘটে। এছাড়া মাইটোকন্ড্রিয়া জোনাকি পোকার দেহে লুসিফেরন নামক প্রোটিনকে জারিত করে ফসফরাস ( P ) উৎপাদনের মাধ্যমে আলো জ্বালাতে সাহায্য করে।