স্বাভাবিকভাবে আমরা যেভাবে হাত পা নাড়াই একটি মৃত শরীর কি সেটা পারে ?? কিংবা আমাদের মত করে কি তাদের স্নায়ু উদ্দীপনা কাজ করে? এরকম কিছু কিছু প্রশ্ন হরহামেশাই শোনা যায়।
বাস্তবে পুরোপুরি সেরকম কিছু না হলেও মৃত দেহের ভেতর এমন কিছু কার্যকলাপ চলে, যা অবাক করে দেয়ার মত। আমরা শুধু মৃতদেহটায় দেখি, এর ভেতরে কি চলে বা কিভাবে চলে তা কিছুই দৃশ্যমান নয়।
মানুষ বা যেকোনো পশুপাখির শরীরে মৃত্যু পরবর্তী সময়ে কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তনের কারণে মৃত দেহের পেশিগুলো ধীরে ধীরে শক্ত হতে থাকে। এ প্রক্রিয়াটি রিগর মর্টিস বা Rigor Mortis নামে পরিচিত। ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয় এই প্রক্রিয়া।
রিগর মর্টিসের প্রক্রিয়াটি একবার দেখে নেয়া যাকঃ
মানুষের মৃত্যুর পর প্রথমে হৃদপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দেয়। তখন Capillary বা কৈশিকনালী থেকে রক্ত বড় বড় শিরার দিকে যেতে শুরু করে। মাধ্যকর্ষণ শক্তির কারণে মৃতদেহ যে অবস্থানে থাকে ( দাঁড়ানো থাকলে পায়ের দিকে, শোয়ানো থাকলে পিঠের দিকে) সেদিকে রক্ত যেতে থাকে। একে বলা হয় Livor Mortis। এসময় পেশিগুলোর বন্ধন কিছুটা কমে যায় এবং শরীর অনেকটা নরম হয়ে যায়।
পরবর্তীতে, শরীর আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে শুরু করে। মারা যাওয়ার পর প্রথম ঘন্টায় শরীরের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রী কমে যায়। এরপর প্রতি ঘন্টায় এক ডিগ্রী করে কমতে থাকে। নির্দিষ্ট সময় পর এ তাপমাত্রার পরিবর্তন বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় Algor Mortis। সাধারণত মৃতদেহের তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী পর্যন্ত নেমে আসে।
এরপরের ধাপই হচ্ছে Rigor Mortis। Adenosine Triphosphate (ATP) ধীরে ধীরে কমে যাওয়াতে রিগর মর্টিসের সূচনা হয়। মৃত্যুর ৩/৪ ঘন্টা পরই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। চোখ, ঘাড় এবং চোয়ালের পেশিগুলো আগে শক্ত হয়।
মৃত্যুর পর থেকে আট ঘন্টা পর্যন্ত শরীর আস্তে আস্তে শক্ত হতে থাকে, কিন্তু বিশেষ কিছু অঙ্গ তখনও নমনীয় থাকে। ৮-১২ ঘন্টার মধ্যে প্রায় সবগুলো পেশি পুরোপুরি শক্ত হয়ে যায়। এরপর আরো ১২ ঘন্টা পেশিগুলো শক্ত হয়ে থাকে। মৃত্যুর ২৪-৩৬ ঘন্টার মাঝে পেশিগুলো ধীরে ধীরে আবার নরম হতে শুরু করে।
পুরো প্রক্রিয়া প্রায় ২৪-৩৬ ঘন্টা পর্যন্ত চলে। মাঝে মাঝে ৪৮ ঘন্টার মতও হয়। তবে মৃতদেহ যদি নিউমোনিয়া বা কোনো রকম ঠান্ডা রোগে আক্রান্ত থেকে থাকে, তাহলে রিগর মর্টিসের প্রক্রিয়া সামান্য বিলম্বিত হয়ে থাকে।