ছেলেটা ভারি দুষ্টু! স্কুলে প্রতিদিন এর-ওর সঙ্গে মারপিট বেঁধে যায়, পুঁচকে বয়সেই বন্ধুরা তাকে ‘মারকুটে’ হিসেবে চেনে।বাবা রমেশ আর মা রাজনি তো বটেই, বড় ভাই অজিতও ভীষণ চিন্তায়পড়লেন এই দুষ্টের শিরোমণিকে নিয়ে।
১৯৮৪ সালের কথা। ছোট ভাইকে নিয়ে অজিত গেলেন ক্রিকেট প্রশিক্ষক রমাকান্ত আচরেকারের কাছে। ক্রিকেটকে বলা হয় ‘জেন্টলম্যানস গেম’, অর্থাৎ ভদ্রলোকের খেলা। ভদ্রলোকের খেলা যদিদুষ্ট ছোট ভাইটাকে কিছুটা ভদ্র করতে পারে, সেই আশায়ই যাওয়া।আশার গুড়ে বালি। অজিতের ছোট ভাইয়ের খেলা দেখে আচরেকার বলে দিলেন, ‘নাহ্, একে দিয়ে হবে না। সে খেলায় মনোযোগী নয়।’ মনোযোগ থাকবেই বা কী করে? ক্রিকেট যে তাকে একেবারেই টানে না। সে তখন টেনিসে মজেছে।প্রিয় টেনিস খেলোয়াড় জন ম্যাকেনরো, ম্যাকেনরোর মতো লম্বা চুল রেখেমাথায় ব্যান্ডেনাও বাঁধতো সে। অজিত হাল ছাড়লেন না। আচরেকারকে বললেন, ‘আরেকটা সুযোগ দিন। আপনি সামনে না থেকে ওকে ওর মতো খেলতে দিন।’
আচরেকার মানলেন। দূরে একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখলেন পুঁচকে ছোড়াটার খেলা।সেদিন কী দেখে তাঁর মন গলেছিল, কে জানে! অবশেষে অজিতের ছোট ভাইকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণকরেছিলেন তিনি।রমাকান্ত আচরেকার তখনো জানতেন না, এই পুঁচকে ছেলেই একদিন দুনিয়া কাঁপাবে! পুরো ক্রিকেট-বিশ্ব তাকে চিনবে এক নামে—শচীন টেন্ডুলকার! যার আরেক নাম লিটলমাস্টার।
অল্প কয়েক দিনেই আচরেকারের প্রিয় শিষ্য হয়ে উঠেছিলেন টেন্ডুলকার। শিষ্যকে গড়ে তুলতে আজব সব পদ্ধতি অনুসরণ করতেন তিনি।এই যেমন ‘পয়সা পদ্ধতি’!
গুরু রমাকান্ত আচরেকারের কাছে চলছে প্রশিক্ষণস্টাম্পের ওপর একটি এক রুপির পয়সা রাখতেন আচরেকার।বলতেন, যে টেন্ডুলকারকে আউট করতে পারবে, পয়সাটি তার। আর যদি কেউইআউট করতে না পারে, পুরস্কার হিসেবে পয়সার মালিক হবে টেন্ডুলকার।শিষ্যও কম যায় না! গুরুকে মুগ্ধ করে মোট ১৩টি পয়সা (১৩ রুপি) বাগিয়েছিল সে।শচীন টেন্ডুলকার এখনো দাবি করেন,শত শত পুরস্কারের ভিড়েও সেই ১৩টি পয়সা তাঁর কাছে অমূল্য!
তাহলে সেই মারকুটে, দুষ্টু ছেলেটার কী হলো? হুম, ক্রিকেটে বুঁদ হওয়ার পরও পাড়ার ছেলেপুলেরা তাকে ভয় পেত বটে। তবে ‘মারকুটে’ হিসেবে নয়, ‘মারকুটে ব্যাটসম্যান’ হিসেবে!আচরেকারের শিষ্যদের মধ্যে তখন নেটে অনুশীলনের সময় বোলিং পরিচালনা করতেন কসটিউভ অ্যাপ্টে। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘অনুশীলনের সময় প্রত্যেক ব্যাটসম্যানকে ৩০-৪০টি বল খেলতে হতো।১৫টি বল খেলার পরই মারকুটে হয়ে উঠত টেন্ডুলকার।এত জোরে ব্যাট ঘুরাত যে প্রায়ই বলের আঘাত লাগত সিনিয়র খেলোয়াড়দের গায়ে। একসময় তো তাঁরা বলেই দিলেন, “আমরা আশপাশে থাকলে শচীনকে খেলতে দেবে না!”’
মজার ব্যাপার কী জানো? ১৯৮৭ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ‘বল কুড়ানি’র কাজ করেছিলেন লিটল মাস্টার।সীমানার বাইরে দাঁড়িয়ে শচীন দেখেছিলেন সেবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার জয়।১৪ বছরের কিশোরটি হয়তো সেদিনই হাত মুঠো করে মনে মনে বলেছিলেন, ‘একদিন এই সীমানার বাইরে নয়, ভেতরে থাকব।ভারতকে বিশ্বকাপ জেতাব!’ তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ২০১১সালে।
কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারের গল্প শুনলে কেমন গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়, তাই না! ‘বিনয়ী’ শচীন কিন্তু বিশ্বাস করেন, তাঁর চেয়েও বড় মাপের ক্রিকেটার এসে চমকে দেবে ক্রিকেট-বিশ্বকে। কে হবে সেই নতুন প্রতিভা? হয়তো তুমি !