মানুষের শখ সীমাহীন। রঙ বেরঙের শখ, স্বপ্ন থাকে মানুষের। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানো বা রোমাঞ্চকর কিছু করা এগুলো মানুষের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে থাকে। এমনই একটি রোমাঞ্চকর খেলা হচ্ছে Skydiving বা Parachuting।
কাঁধে ব্যাগের মত কিছু নিয়ে চলন্ত বিমান থেকে কিছু লোক হঠাৎ লাফ দিয়ে নিচে ঝাঁপ দিল! দৃশ্যটাই দেখতে যথেষ্ট রোমাঞ্চকর তবে যে অনুভব করে তার রোমাঞ্চ মনে হয় ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়! আকাশে উড়ন্ত কোন বিমান থেকে লাফ দিয়ে মুক্তভাবে নিচে পড়ার সময় প্যারাস্যুটের সাহায্যে নিরাপদে মাটিতে নেমে আসাকে বলা হয় স্কাইডাইভিং বা প্যারাস্যুটিং। স্কাইডাইভিংয়ের ক্ষেত্রে বিমান থেকে লাফ দেয়ার পর বেশ কিছুক্ষন বাতাসে ভেসে বেড়ান এই খেলায় অংশ নেয়া দুঃসাহসী মানুষগুলো। একটি নির্দিষ্ট সময় পর তারা সঙ্গে থাকা প্যারাসুট খুলে দেন। প্যারাসুট তখন সেই বেগ নিয়ন্ত্রন করে ডাইভারকে ধীরে ধীরে মাটিতে নামিয়ে নিয়ে আসে।
স্কাইডাইভিং এর জন্য আবহাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। মেঘলা দিন হলে বা বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকলে স্কাই ডাইভ করতে দেওয়া হয় না। মেঘের ভেতর দিয়ে লাফ দেয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। স্কাইডাইভিং অনেক ঝুঁকিপূর্ণ একটি খেলা মনে হলেও এটি আসলে খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ডাইভ করবার আগে ডাইভারদের পরিপূর্ণভাবে ট্রেনিং দেওয়া হয়, তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রীও বারবার পরীক্ষা করা হয়। ভুলভাবে অথবা সময়মত প্যারাস্যুট না খোলার কারণে ও অসাবধানতার কারণে মাঝে মাঝে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
সৌখিন ব্যক্তিদের কাছে এটি একটি এক্সট্রিম স্পোর্টস হলেও স্কাইডাইভিং অনেক সময় মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্যও করা হয়। বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনী এবং এয়ারক্রুরা আক্রান্ত বিমান থেকে নিরাপদে নামার জন্য এটি ব্যবহার করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এয়ার ব্যাটেলের সময় স্কাইডাইভিং করা হয়েছে। আমেরিকার ফরেস্ট ফাইটাররা বনের আগুন নেভানোর জন্যও প্রয়োজনে স্কাইডাইভিং করে থাকেন। আমেরিকান সেনাবাহিনী ১৯৩০ সালের দিকে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য নামানোর জন্য বা বিমান থেকে ক্রুদের জরুরী ল্যান্ডিংয়ের জন্য এই পদ্ধতির বিকাশ ঘটায়। পরবর্তীতে ১৯৫২ সাল থেকে স্কাই ডাইভিং একটি আর্ন্তজাতিক খেলায় রুপান্তরিত হয়।
স্কাইডাইভিংয়ের অন্যতম জনপ্রিয় প্রশিক্ষণের পদ্ধতি হলো ট্যান্ডেম স্কাইডাইভিং। এখানে এক প্যারাস্যুটে দুইজন মানুষ থাকে। উপরদিকে থাকেন ট্রেনার আর নিচের দিকে থাকেন সৌখিন স্কাইডাইভার। ট্রেনারের সাথে শক্ত করে আটকানো থাকেন শিক্ষানবিস স্কাইডাইভার। এভাবে লাফের ফলে নতুন স্কাইডাইভারের দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমে যায় আর সে স্কাইডাইভিং এর পূর্ণ আনন্দও লাভ করে।
আবার, একাধিক ব্যক্তি একসাথে লাফ দিয়ে আকাশে থাকতেই একে অপরকে নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে স্পর্শ করেন ও নিজেদের মধ্যে একটি ফর্মেশন সৃষ্টি করেন। স্কাইডাইভিংয়ের বিভিন্ন ফর্মেশন রয়েছে। যেমন –
# 4-Way Sequential,
# 4-Way vertical Sequential,
# 8-way sequential,
# 16-way sequential,
# Big Ways
বিগ ওয়েসে অনেক সংখ্যক স্কাইডাইভার একসাথে হয়ে ফর্মেশন তৈরি করে। মূলত দুই প্রকারে ফর্মেশন গঠন করা হয় – র্যান্ডম আর ব্লক। বিগ ওয়েতে করা সবচেয়ে বড় ফর্মেশনের বিশ্বরেকর্ডে মোট ২২২ জন স্কাইডাইভার অংশ নিয়ে ৪০০ ওয়ে ফর্মেশন করে। ২০০৬ সালে এই রেকর্ডটি করে ওয়ার্ল্ড টিম ও এই ফর্মেশনের স্থায়িত্বকাল ছিল ৪.২৫ সেকেন্ড।