শরীরে কী মাখছি আমরা ?

কখনো কি সাবান ব্যবহারের আগে কিছুক্ষণের জন্য ভেবেছি যে সাবান ব্যবহার করছি তা কি সত্যি সাবান নাকি জলজ্যান্ত রসায়ন ? কখনো কি সাবান কেনার আগে সাবানে TFM এর পরিমাণ কতটুকু রয়েছে তা কি ?  

সাবান ব্যবহার করি না, এমন মানুষ হয়তো খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। রঙ্গিন প্যাকেটে মোড়া সাবানগুলো তৈরির প্রক্রিয়া যথেষ্ট জটিল।

সেই প্রাচীন রোম যুগ থেকে সাবানের প্রচলন শুরু। তখন হয়তো এরকম কাগজে মোড়া প্যাকেট ছিলো না। বিশাল বিশাল ষাঁড়ের চামড়ার নিচের চর্বিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সাবান হিসেবে ব্যবহার করতো রোমানরা। কালের পরিবর্তনে পরিবর্তন এসেছে সাবানের আঙ্গিকেও। হয়েছে আধুনিকায়ন, এসেছে নতুনত্ব।

চলো দেখে নেই কিভাবে তৈরী করা হয় সাবানঃ

ট্রাইগ্লিসারাইড সমূহ সোডিয়াম বা পটাসিয়াম হাইড্রক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে গ্লিসারল এবং এক প্রকার ফ্যাটি এসিড তৈরি করে। এই বিশেষ ফ্যাটি এসিড লবণটিকে আমরা সাবান বলে জানি। আর সাবান তৈরীর এই প্রক্রিয়াকে স্যাপোনিফিকেশন (Saponification)বা সাবানায়ন বলা হয়।

অর্থাৎ,

ট্রাইগ্লিসারাইড+ সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড/ পটাসিয়াম হাইড্রক্সাইড → গ্লিসারল+ সাবান

তুলনামূলক শক্ত ধরনের সাবান তৈরীর জন্যে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড এবং একটু কোমল ধরনের সাবানের জন্যে পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড ব্যবহার করা হয়।

আমরা যে সাবান ব্যবহার করছি তা মূলত দুই ধরণের হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বার সাবান আর অন্যটি হচ্ছে তরল সাবান। আবার তরল সাবানের মধ্যে রয়েছে হ্যান্ডওয়াশ ও শাওয়ার জেল। 

জীবাণুনাশক সাবানের মধ্যে Triclosan নামক উপাদানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। Triclosan উপাদানটি এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। 

সাবানে গ্লিসারিনের উপস্থিতি একটি বড় বিষয়। কেননা সাবানে গ্লিসারিন থাকলে সাবান ব্যবহার করলে ত্বকে রুক্ষতা ভাবটা থাকে না। অর্থাৎ, সাবানে উপস্থিত গ্লিসারিন রুক্ষতা দূর করে ত্বকে আদ্রতা বজায় রাখে।                 

এবার আসা যাক সাবানের গুনগত মানের প্রসঙ্গে। সাবান তৈরী করা যতটা সহজ, এর গুনগত মান যাচাই করা ততটাই কঠিন।

সব ধরনের সাবানের প্যাকেটের গায়ে TFM (Total Fatty Matter) দেয়া থাকে। TFM সাবানে উপস্থিত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণকে নির্দেশ করে। এর মানে হচ্ছে এই সাবানে বিদ্যমান ফ্যাটি এসিডটি অন্যান্য এসিডের ক্ষমতা কতটা কমিয়ে দিয়েছে। সাধারণত ৬০% TFM এর নিচের সাবানগুলো ত্বকের জন্যে ক্ষতিকর। আর সবচেয়ে ভালো হয় ৭০% এর বেশি TFM  সমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করলে।

সাধারণত TFM এর উপর নির্ভর করে সাবানকে তিন গ্রেডে ভাগ করা হয়। গ্রেড ১ এর সাবানের TFM ন্যূনতম ৭৫% হয়ে থাকে। আবার গ্রেড ২ এর ক্ষেত্রে এই TFM এর পরিমাণ ন্যূনতম ৬৫% এবং গ্রেড ৩ এর ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৬০% হয়ে থাকে। কাপড় কাঁচার সাবানে বা ড্রাই পাউডারে TFM এর পরিমাণ প্রায় ৫০% বা এর কম থাকে। এর ফলে কাপড় কাঁচার সাবান শক্ত হয় অর্থাৎ সাবানে তেলের বা ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ অনেক কম থাকে। 

তাই, সাবান কেনার আগে অবশ্যই TFM এর পরিমাণের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। কেননা গোসলের জন্য সাবানে উপস্থিত TFM এর মান যত বেশি হবে, সাবানটি তত বেশি ব্যবহারের উপযোগী হবে।   

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন