চলমান অবরোধ শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য মুর্তিমান এক আতঙ্ক। তার কারণ আন্দোলনের নামে এই অবরোধ এখন ভয়ংকর রুপ নিয়েছে। তারা অবরোধের সহিংস রূপ দেখে স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। স্কুল যদি খোলা থাকে সেক্ষেত্রে তারা ভয়কে মনের মধ্যে পুষে রেখে স্কুলে যাচ্ছে। এতে করে তার মানসিক বিপর্যয় হতে পারে। কারণ স্কুলে যাওয়াটা হচ্ছে তাদের মুখ্য কাজ।
এবং এটা যদি অবরোধ বা অন্যান্য কারণে বাধাগ্রস্ত হয় তবে তাদের স্বাভাবিক বিকাশটা ব্যাহত হয়। বাসায় থাকতে থাকতে তাদের শিক্ষার প্রতি, পড়াশোনার প্রতি একটা অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে। এবং সবচেয়ে বড় কথা এই পরিস্থিতিতে তারা একটি ভীতিকর অবস্থার মধ্যে আছে, মানসিক চাপের মধ্যে আছে। তারা যেটা দেখছে, বুঝছে এবং শুনছে তাতেও তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হচ্ছে। চারদিকে এই বদ্ধ পরিবেশ থাকার কারণে তারা স্কুলে যেতে পারছে না।
মাঝে মাঝে তাদের স্কুল কামাই হতে পারে। সেটা হয়তো অসুস্থতা বা বিশেষ কোনো কারণে। কিন্তু যখন ভীতিকর কোনো পরিস্থিতির কারণে তাদের স্কুলটা বাদ দেওয়া হচ্ছে সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে একধরনের মানসিক চাপ অনুভূত হয়। যেটা তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায়। হরতাল বা অবরোধ আন্দোলনের স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া।
কিন্তু এই হরতাল, অবরোধের মধ্যে যখন গাড়ি পোড়ানো হয়, পুড়িয়ে মানুষ মারা হয় এবং এই জাতীয় আন্দোলনের মধ্যে যখন বিকৃত ধারা চলে সেটা কারো কাম্য হতে পারে না। এবং যেকোনো বিকৃত ধারা শিশুর সুস্থ বিকাশের অন্তরায়। এতে তাদের মনের উপরে এক ধরনের বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। এই বিরুপ প্রভাবের কারণে তার শিশু অবস্থাতেতো বটেই এমনকি পরিণত বয়সেও তার মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
অভিভাবকদের জন্য আমার পরামর্শ, এই ধরনের ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি যাতে আপনার শিশু না হয় সেজন্য আগে থেকেই সচেতন থাকতে হবে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে অবরোধের নামে সহিংস দৃশ্যের মুখোমুখি তারা যেন না হয়। এই রকম পরিস্থিতিতে শিশুদের ইতিবাচক ধারনা দিতে হবে।
স্কুলে না যাওয়ার কারণে তাদের যে সময়টা নস্ট হচ্ছে তারা যেন বাড়িতে শিশুদের সেই ক্ষতিটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদেরকে নিরাপদ রাখতে হবে। আবার বাইরের ভীতিকর পরিস্থিতির কারণে তাদেরকে একেবারে বাসায় আটকে রাখাও যাবে না। তাদের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। তাদের মনের মধ্যে কোনো রকম ভয়ের সঞ্চার হতে দেওয়া যাবে না। রাজনীতিবিদদের জন্য আমার আলাদা কোনো পরামর্শ নেই।
আন্দোলনের স্বাভাবিক নিয়ম মেনে আপনারা আন্দোলন করুন। যাতে সাধারণ মানুষকে এর ভুক্তভোগী না হতে হয়। আপনাদের আন্দোলনের মধ্যে যেনো কোনো বিকৃত ধারার আমদানি বা চর্চা না ঘটে। সবচেয়ে বড় কথা দেশের মানুষ, দেশের আগামী প্রজন্মকে সুস্থ্যভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুনিশ্চিত করুন।
ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ
চাইল্ড সাইকায়েট্রিস্ট
সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল