‘সুক’ হচ্ছে খোলা আকাশের নীচে একধরণের উন্মুক্ত বাজার। আরব অঞ্চলগুলোতে বিশেষ করে মধ্য প্রাচ্য, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার শহরগুলোতে এ ধরণের বাজার দেখা যায়।
১৯শ শতকে যখন ফ্রান্স উত্তর আফ্রিকার মরক্কো, আলজেরিয়া ও তিউনেশিয়াতে আধিপত্য বিস্তার শুরু করে তখন এই সুক বাজারের পরিচিতি পাওয়া যায়। মূলত এই অঞ্চলের বাজারগুলোকে বোঝাতে ‘সুক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। আধুনিক আরবি ভাষায় ‘আল-সুক’ বলতে প্রকৃত বাজার এবং অর্থনৈতিক বাজার উভয়কেই বোঝায়।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, আগে সাধারণত সুক বসতো শহরের বাইরে। কোন একটা শহরের প্রবেশস্থলের দিকে বা মূল রাস্তায় যেখানে মানুষজন বিশ্রাম নেয়ার জন্য থামত সেসব জায়গায় এই বাজারের পসরা নিয়ে বসতো ব্যবসায়ীরা। শহরে আসা কাফেলা বা অন্যান্য লোকজন ছিল এই বাজারের মূল ক্রেতা। ধীরে ধীরে শহর এবং মানুষজন বৃদ্ধি পাওয়ায় সুক বাজারের পসারও বাড়তে থাকে। বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক উৎসবে এই বাজার বসা শুরু করে। একসময় এই বাজারের গুরুত্ব উপলব্ধি করে শহরের ভেতরেই স্থায়ীভাবে সুক বাজারের আয়োজন হতে থাকে।
সুক বাজার অস্থায়ী এবং স্থায়ী এই দুই রকমের হয়ে থাকে। অস্থায়ী সুক বাজারগুলো বার্ষিক, মাসিক বা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে বসে। সবচেয়ে পুরাতন যে সুক বাজারটি সম্পর্কে জানা যায় সেটি বছরে একটি নির্দিষ্ট উৎসবের সময় বসতো। প্রাক-ইসলামি যুগে সৌদি আরবের মক্কা এবং তাইফের নিকটবর্তী স্থানে পবিত্র ধু আল-কিদাহ মাসে ‘সুক উকাধ’ নামে একটি সুক বাজার বসতো। কেনাবেচার পাশাপাশি কবিগানের আসর ছিল এই বাজারের একটি অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়াও আরবের বিভিন্ন জায়গায় মাসিক ও সাপ্তাহিক সুক বাজার দেখা যায়। সাধারণত গবাদি পশু, কৃষি উপকরণ, গৃহস্থালি জিনিসপত্র, মসলা ইত্যাদি পাওয়া যায় এসব বাজারে।
অন্যদিকে স্থায়ী সুক বাজারগুলো খোলা আকাশের নীচে একটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিদিনই বসে। তবে এটিও প্রকৃতপক্ষে স্থায়ী বাজার নয়। বিক্রেতারা গাড়িতে করে তাদের পণ্য নিয়ে আসে, সারাদিন সেগুলো বিক্রি করে এবং রাতের বেলা চলে যায়। কোন বিক্রেতার কোন নির্দিষ্ট স্থান থাকে না। তবে অনেক জায়গায় স্থায়ী দোকান তৈরি করে সুক বাজার তৈরি করা হয়েছে যেমনঃ আল-মদিনা সুক। ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুক পৃথিবীর বৃহত্তম সুক বাজার।
পণ্যের উপর ভিত্তি করে আবার সুক বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে যেমন কাপড়ের সুক, সোনার সুক, মসলার সুক, চামড়ার সুক ইত্যাদি। সেই সাথে সুক বাজারে সবজি, ফলমূলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিসই পাওয়া যায়।
পৃথিবীজুড়ে কয়েকটি বিখ্যাত সুক হচ্ছে বাহরাইনের মানামা সুক, দামেস্কের বিজৌরিয়া সুক, বাগদাদের সারেই সুক, জেরুজালেমের খান আল-জেইত সুক, আলেকজান্দ্রিয়ার জানকাত আল-নিসাওয়ান সুক ইতাদি।