‘সাবাস বাংলাদেশ/ এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/ জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার/ তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ সত্যি এই পৃথিবী অবাক তাকিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কীর্তি। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত হওয়ার পর তো প্রশংসার বন্যায় ভেসে যাচ্ছে টাইগার বাহিনী। পরপর দুই ম্যাচে বল হাতে যিনি ভারত বধের নায়ক সেই মুস্তাফিজ এখন বাংলার সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমের এক আলোচিত নাম বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে।
দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় মুস্তাফিজুর রহমানকে “সাতক্ষীরার সাইনাইড” বলে অভিহিত করা হয়েছে। কেননা মুস্তাফিজুরের স্লোয়ার কাটার বলগুলো ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে সাইনাইডের চেয়েও কম যায় না। মুস্তাফিজুরের এই মায়াবী কাটার বলের নমুনা আমরা প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও ৩৬ থেকে ৪৪ ওভারের মধ্যে দেখেছি।
রায়না: শর্ট। কাটার মেশানো। টেনিস বলের মতো বাউন্স করে ভারতীয় মিডল অর্ডারের বাঁ হাতির ব্যাট ছুঁয়ে কিপারের কাছে চলে গেলো।
অক্ষর পটেল: সোজা এল, প্যাডে পড়ল এবং এলবিডব্লিউ।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন: অফকাটার, খোঁচা ও ড্রেসিংরুম।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি: মারাত্মক কাটারটা বুঝতেই পারলেন না। অনেক আগে শটের জন্য ব্যাট বাড়িয়ে দিলেন। বলটা থমকে ব্যাটে লেগে শর্ট কভারে চলে গেল।
জাদেজা: সোজা ইয়র্কার এল, ব্যাট প্যাড হয়ে বোল্ড
আজ জেনে নেয়া যাক মুস্তাফিজুরের রহস্যময় কাটার বোলিং সম্বন্ধে অর্থাৎ এই কাটার বোলিং কিভাবে করতে হয়।
বলের সিমের দুই পাশে তর্জনী ও মধ্যমাকে রেখে এই দুই আঙুলের সাহায্যেই বল ঘোরাতে হয়। পিচে পড়ার পর অফ স্টাম্পের বাইরের দিকে বাঁক নেওয়া বলকে অফকাটার, আর লেগ স্টাম্পের দিকে বাঁক নেওয়া বলকে ইনকাটার বা লেগকাটার বলে। অফকাটারের জন্য বলকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরাতে মূল ভূমিকা থাকে তর্জনীর। বল ছোড়ার মুহূর্তে সেটিকে স্লিপের দিকে তাক করে রাখতে হবে, আর ডেলিভারির জন্য লাফ দেওয়ার সময় সামনের (ডানহাতি বোলারের ক্ষেত্রে বাঁ) পায়ের পাতাকেও রাখতে হবে একই দিকে। লেগকাটারের ক্ষেত্রে বল ঘোরাতে হয় ঘড়ির কাঁটার দিকে, আর এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা থাকে মধ্যমার। বল ছোড়ার মুহূর্তে সেটিকে ফাইন লেগের দিকে তাক করে রাখতে হবে, লাফ দেওয়ার সময় সামনের পা-ও থাকবে একই দিকে।
বোলিংয়ে কাটার শব্দটা নতুন কিছু নয়। এর আগেও অনেকে অফ কাটার, লেগ কাটার বল করেছেন। ইমরান খান করেছেন, ইয়ান বোথাম করেছেন, এমনকি স্টিভ ওয়াহ এর কাটার ও ভয়ংকর ছিলো। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল জনসনও কাটার করে থাকেন। তাদের মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমানের পার্থক্য কি? মুস্তাফিজুর রহমানের বল ব্যাটসম্যানরা খেলেতে পারেন না কেনো?
মুস্তাফিজ বল সুইঙ্গের করার সাথে সাথে দুই ধরনের কাটার যোগ করেন। একটা স্লোয়ার এবং অন্যটা ফাস্ট। কোনটা স্লোয়ার এবং কোনটা ফাস্ট সেটা নিয়ন্ত্রণ করে মুস্তাফিজের বলের উপরে রাখা দুই আঙুল। বলের এই বৈচিত্র্যের ফলে ব্যাটসম্যানরা দ্রুত বুঝতে পারেন না কোনটা স্লোয়ার এবং কোনটা ফাস্ট।