পৃথিবীর অভ্যন্তরের পানির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। যদিও আজ বা কালই আমাদের পানি শেষ হচ্ছে না কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে।
গত ১০ বছর ধরে নাসার গ্রেস (GRACE) স্যাটেলাইট পৃথিবীর পানির পরিমানের উপর নজর রাখছে। নাসার গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ৩৭টি এ এক্যুইফারের (ভূগর্ভস্ত পানির স্তর যেখান থেকে নলকূপের সাহায্যে পানি উঠানো যায়) অর্ধেকেই আশঙ্কাজনকহারে পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে। যদিও এই স্তরগুলো আবারও পানি দিয়ে ভরে উঠতে পারে, কিন্তু সে সম্ভাবনা খুবই কম।
ভূগর্ভের এক্যুইফারগুলো লাখ লাখ মানুষকে বিশুদ্ধ পানির যোগান দেয়। এদের মধ্যে ২১টি এক্যুইফারে ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে যে পরিমাণ পানি খরচ হয়েছে সে পরিমাণ পানি আবার ভর্তি হতে পারেনি। আরব অঞ্চলের এক্যুইফারগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। প্রতিটি এক্যুইফার গড়ে ৬০ লাখ মানুষকে পানি সরবরাহ করে।
মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, মহাকাশের স্যাটেলাইট থেকে পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ পানির পরিমান নির্ণয় কীভাবে সম্ভব। বিশেষায়িত এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর কোথাও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সামান্য পরিবর্তন হলেও তা ধরতে পারে। যেখানে পানির পরিমাণ বেশি থাকে সেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও বেশি অনুভূত হয় বলে স্যাটেলাইট তা নির্ণয় করতে পারে।
নাসার পানিবিজ্ঞানি জে ফেমিংলাইটি বলেন, ‘অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। পৃথিবীর পানির পরিমাণ কমেই যাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের অফুরন্ত পানি নেই। এই ভূগর্ভস্ত পানি আমরা কীভাবে রক্ষা করতে পারি সেটা নিয়ে আমাদের শীঘ্রই কোন উপায় বের করতে হবে’।
পানির এই পরিমাণ কমে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। মানুষ সেচ এবং দৈনন্দিন কাজে প্রচুর পানির ব্যবহার করছে। যেসব জায়গায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি এবং পানির অন্য কোন উৎসও নেই সেখানাকার এক্যুইফারের অবস্থা শোচনীয়। কিন্তু যে হারে এসব পানি তোলা হচ্ছে সে পরিমাণে পানি কিন্তু ফিরে যাচ্ছে না। ভূগর্ভের বেশিরভাগ পানিই বাস্প হয়ে বৃষ্টির মাধ্যমে অবশেষে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে।
সেই সাথে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বিভিন্ন জায়গার তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে পরিবেশ শুষ্ক হয়ে পড়ছে এবং বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত আরও খারাপ হচ্ছে।