পাই (π) এর ইতিকথাঃ পর্ব ২

মানুষ পাই ( π) নিয়ে গবেষণা শুরু করে মূলত জমি-জমার নিখুঁত পরিমাপ করার জন্য। খ্রিস্টপূর্ব যুগে চাইনিজরা π এর মান দশমিকের পরে ৭ ডিজিট পর্যন্ত বের করতে সক্ষম হয়েছিল। গ্রিক বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস π এর মান বের করার আরো উন্নত একটি পদ্ধতি আবিস্কার করেন যাকে বলা হয় Polygon Approximation Method। এরপর ধীরে ধীরে এটি নিয়ে গবেষণার পরিমান বাড়তে থাকে এবং একেক বিজ্ঞানী এর একেকরকম মান বের করেন। ৩.১ পর্যন্ত সবার এক থাকলেও এর পরের ডিজিটগুলোতে পার্থক্য দেখা যায়।

ষোড়শ এবং সপ্তাদশ শতাব্দীর আমলে আবিস্কার হয় Infinite Series Technique এবং ক্যালকুলাস, যা দিয়ে অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা কোমর বেঁধে নামেন  π এর আরো নিখুঁত মান বের করতে। এমনকি স্যার আইজ্যাক নিউটন ও π এর মান হিসাব করেন এবং ১৫ ডিজিট পর্যন্ত বের করেন। তবে নিউটন মাত্র এই কয়টি ডিজিট বের করতে পেরেছিলেন বলে নিজেই বিব্রত বোধ করেন !

তবে সেই সময় এটি পাই (π) হিসাবে পরিচিত ছিল না। আগে গণিতবিদরা c অথবা p ব্যবহার করে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত বোঝাতেন। ওয়েলস গণিতবিদ উইলিয়াম জোনস ১৭০৬ সালে প্রথম গ্রীক বর্ণ π (পাই) ব্যবহার করেন। তবে π কে জনপ্রিয় করে তুলেন বিজ্ঞানী ইউলার। ১৭৩৬ সালে তার বই Mechanica তে তিনি গ্রীক বর্ণ π ব্যবহার করেন এবং সেটি পরবর্তীতে অন্যান্য বিজ্ঞানীরাও ব্যবহার করতে থাকেন।

কম্পিউটার ও বিভিন্ন শক্তিশালী এলগরিদম আবিষ্কার হওয়ার সাথে সাথে π এর মান আরো সহজে বের করা সম্ভব হতে লাগলো। তবে বাস্তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণাতে π এর কয়েকশ ডিজিটের বেশি দরকার পড়ে না। কিন্তু তারপরেও বিজ্ঞানীরা কেন ট্রিলিয়ন ডিজিটেরও বেশি মান বের করছেন? এটি আসলে মানুষের আরও বেশি জানার অদম্য আকাঙ্ক্ষার জন্য হচ্ছে। প্রকৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে π এর উপস্থিতি কেন থাকে তা বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারেননি, তবে যেহেতু বৃত্তের মত জিনিষের সাথে π এর সংজ্ঞা জড়িয়ে আছে তাই মনে করা হয় যে প্রকৃতির সবকিছুর জ্যামিতিক আকৃতি লাভের চেষ্টার জন্যই এদের সমীকরণে π পাওয়া যায়।

পাই শুধু বিজ্ঞানীদের কাছে থাকেনি বরং সাধারণ মানুষও π কে নিজেদের মত গ্রহন করে নিয়েছে। π নিয়ে গান বানানো হয়েছে, লেখা হয়েছে উপন্যাস। প্রতি বছর মার্চের ১৪ তারিখ পালন করা হয় “ পাই দিবস ”।  π নিয়ে রয়েছে মজার সব লোককথা ও তত্ত্ব। যেমন কার্ল সাগান তার উপন্যাস “ Contact ” এ লিখেছেন যে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা π এর ডিজিটের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছেন মহাবিশ্বের সব সিক্রেট ! এজন্যই এই ডিজিটগুলো এতো দামী !

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন