তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া বেড়েছে। আর এই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে হবে। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা ও সর্বস্তরে সচেতনতা।
বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ বেসিস সভাকক্ষে আয়োজিত ‘প্রশ্নফাঁস বিপর্যয় : কারণ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তিগত সমাধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় আলোচকরা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ), জাগো ফাউন্ডেশন, পরিবর্তন চাই ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি আইটি সোসাইটি (ডিইউআইটিএস) আয়োজিত এই গোলটেবিল আলোচনার সভাপতিত্ব করেন বিডিজবস ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাসরুর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বন্ডস্টেইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর শাহরুখ ইসলাম।
আলোচকদের মধ্যে ছিলেন চ্যাম্পস টোয়েন্টিওয়ান ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, পরিবর্তন চাই এর উদ্যোক্তা ফিদা হক, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের সহ-সভাপতি নাজনিন নাহার, জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভী রাখসান্দ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি আইটি সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইমরান, বিজনেস অটোমেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল হাসান মিতুল, ন্যাসেনিয়া-র ব্যবস্থাপনা পরিচালক শায়ের আহমেদ, প্রেনিউর ল্যাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ নিজামী প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মীর শাহরুখ ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছানো পর্যন্ত আংশিক অনিরাপদ হলো প্রশ্ন ছাপা ও পুরোপুরি অনিরাপদ হলো উপজেলা পর্যায় থেকে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পরিবহন ও সংরক্ষণ। অন্যান্য ধাপগুলোতে সরকারি নিরাপত্তা থাকায় কম ঝুঁকিপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে এই পুরো প্রক্রিয়াটা নিরাপদ করা সম্ভব। ইতিমধ্যে মেডিকেল পরীক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা গেছে। পরীক্ষাভেদে প্রযুক্তিনির্ভর সিস্টেম তৈরি করতে পারলে একইভাবে অন্যান্য পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা যাবে।
ফাহিম মাশরুর বলেন, আমরা এখনও প্রশ্নফাঁসের বিষয়টিকে স্বীকারই করতে পারি না। কারণ উদঘাটন ও তার সমাধান না করে আমরা প্রযুক্তিকে দোষারোপ করি ও বন্ধ করে দিই। কিন্তু প্রশ্নফাঁস রোধ করতে আমাদের এই প্রযুক্তিকেই ব্যবহার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে রাসেল টি আহমেদ প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রথমত, প্রযুক্তিগত সমাধান। দ্বিতীয়ত, জিপিএ ৫ পাওয়ার আবশ্যকতা থেকে বেরিয়ে আসা। অর্থাৎ অ্যাসেসমেন্টের বিপরীতে ইভাল্যুয়েশনের দিকে নজর দেওয়া। তৃতীয়ত, সকলকে সচেতন হওয়া। মনে রাখতে হবে, প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ঠরা সাময়িক লাভবান হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিই হবে।
আলোচনায় বক্তারা আরও বলেন, এসএসসি ও অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস এখন এক মহামারী আকার ধারণ করেছে। এখনই যদি একে মোকাবেলা করা না যায় তাহলে একটি প্রজন্মের সম্ভবনাকে হত্যা করা হবে।
বক্তারা বলেন, প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে যেমন প্রশ্নফাঁস সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করেই এটি রোধ করা সম্ভব। প্রযুক্তির ব্যবহারের সাথে সাথে অপরাধীদের সনাক্তকরণ, আইনের কঠোর প্রয়োগ ও শাস্তি, দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ করেই এই বিপর্যয় সামাল দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে পাওয়া প্রস্তাবনাগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পেশ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।
অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিলো বিডিজবস ডটকম ও বন্ডস্টেইন।