Augmented Reality: কল্পনাকে বাস্তবে রূপদান

আচ্ছা এই মুহূর্তে যদি এভারেস্ট পর্বতচূড়া থেকে ঘুরে আসা যেত কিংবা যদি কম্পিউটারের গেমের ভিতরের শত্রুগুলোর সাথে একহাত লড়াই করা যেত অথবা লিওনার্দো দা ভিঞ্চির “মোনালিসা”কে দেখতে ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়ামে একটা ঢুঁ মেরে আসা যেত? কি মজাটাই না হত!! তাই না?

যদিও বাস্তবে উপরোক্ত ঘটনাসমূহ করতে অনেক সময় ও টাকা পয়সা খরচ হবে, তারপরেও বিকল্প হিসেবে প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে কৃত্রিমভাবে এসব উপভোগ করার মাধ্যম। বিকল্প এই প্রযুক্তির নাম Augmented Reality

অগমেন্টেড রিয়্যালিটি (Augmented Reality) হল প্রযুক্তির সাহায্যে একটি কৃত্রিম বা বাস্তবভিত্তিক পরিবেশ সৃষ্টি করা অথবা আমাদের আশেপাশের পরিবেশের ওপর কম্পিউটার তৈরিকৃত বস্তুর সন্নিবেশ ঘটানো। এই প্রযুক্তি শুধু কল্পবিজ্ঞানকেই বাস্তবায়িত করে না, অদৃশ্য জগৎকেও দেখতে সাহায্য করে।

সর্বপ্রথম ১৯৫৭ সালে মরটন হেলিগ (Morton Helig) নামক এক ভদ্রলোক Sensorama নামক একটি যন্ত্র তৈরি করা শুরু করেন। তিনি এই যন্ত্রের সাহায্যে দর্শকদের সিনেমার জগতের ভেতরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন যাতে দর্শকদের মনে হয় তারা নিজেই সিনেমার ভিতরে আছেন। যারা নভোথিয়েটারে গিয়েছেন তারা জেনে থাকবেন নভোথিয়েটার অনেকটা মরটন হেলিগের তৈরি Sensorama এর মতই। এখানে ছবি, শব্দ, চেয়ারের কাপুনি ইত্যাদির মাধ্যমে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় যেন দর্শকেরা মনে করেন তারা যেন মহাকাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

এই অগমেন্টেড রিয়্যালিটি প্রযুক্তি আরও ক্ষুদ্রাকারে আমাদের ঘরের মাঝে নিয়ে আসতে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু নামিদামি প্রযুক্তি পণ্য প্রতিষ্ঠান অগমেন্টেড রিয়্যালিটি সম্বলিত ডিভাইস বাজারজাত করা শুরু করেছে।

জনপ্রিয় সার্চইঞ্জিন কোম্পানি গুগল (Google) ২০১৩ সালে বাজারে আনে Google Glass এটি দেখতে সাধারণ চশমার মতই, তবে এর ব্যবহারকারী চশমার কাচের মধ্যে দিয়ে ভিডিও দেখা, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা, বই পড়া সহ আরও অনেক কিছুই করতে পারবে। এতে একটি ক্যামেরা আছে যার সাহায্যে নিমিষেই ছবি তোলা যায়। এটি Voice এবং  Retina command দ্বারা পরিচালিত।

কিন্তু এই পর্যন্ত সবচেয়ে তাক লাগানো অগমেন্টেড রিয়্যালিটি সম্বলিত ডিভাইসটি তৈরি করেছে Microsoft। তাদের যন্ত্রের নাম Hololens। এই যন্ত্রটিতে রয়েছে একটি Head Gear যা অনেকটা একটি আধুনিক সানগ্লাসের মত। এই গ্লাসের সহায়তায় ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই ঢুঁ মেরে আসতে পারে গেমসের বা সিনেমার দুনিয়ায় অথবা ঘুরে আসতে পারে দূরের কোন দেশ থেকে।

যে তিনটি প্রযুক্তির মহাসম্মেলনের ফলে অগমেন্টেড রিয়্যালিটির বিস্তার হচ্ছে তা হল সেন্সর প্রযুক্তি, দূরযোগাযোগের GPS প্রযুক্তি এবং কম্পিউটারের ভিশন প্রযুক্তি (বাস্তব থেকে কোন ছবি গ্রহণ করে তা বুঝতে পারা, ছবি প্রসেসিং বা পর্যবেক্ষন করে ফলাফল নির্ণয়)।

মোবাইলের বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমে এখন ছোটো খাটো আকারে এই অগমেন্টেড রিয়্যালিটি সংযুক্ত বিভিন্ন অ্যাপস পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে অ্যাপল ষ্টোর এবং এন্ড্রয়েডের ষ্টোরে কয়েকটি  অ্যাপস পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে সামনে থাকা যে কোনো বস্তুর প্রতিকৃতি বা ছবি বাস্তবে রূপদান করা যায়।

ভবিষ্যতে অগমেন্টেড রিয়্যালিটির এই বিস্তার প্রযুক্তির অগ্রগতিকে এক নতুন মাত্রা উপহার দিবে তা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন