১৮৬১ সালের শুরুর দিক থেকে মার্কিন ফেডারেল সরকার আর দক্ষিনের দাসনির্ভর কিছু রাজ্যের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিতে শুরু করে। এর মূল কারণ ছিল তৎকালীন সরকারের দাস প্রথা বিলোপের ঘোষণা। ১৮৬০ সালে আব্রাহাম লিংকন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন যিনি আমেরিকা থেকে দাস প্রথা বিলোপ করার ঘোষণা দেন। আমেরিকার দক্ষিণে অবস্থিত ৭টি রাজ্য এর বিরুদ্ধে যায় এবং কনফেডারেট স্টেটস অফ আমেরিকা গঠন করে। পরবর্তীতে আরও ৪টি রাজ্য এদের সাথে যোগ দেয়। এগুলো বাদে দাসবিরোধী বাকি রাজ্যগুলো ইউনিয়ন বা উত্তর নামে পরিচিতি পায়।
১৯শ শতকে যখন আমেরিকা ক্রমশ উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে তখন দেশটির উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে একটা মূল অর্থনৈতিক পার্থক্য ছিল। উত্তরের রাজ্যগুলো ছিল শিল্পনির্ভর এবং দক্ষিণে ছিল কৃষিনির্ভর। দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে বিপুল পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা হত বিশেষ করে তুলা এবং তামাক। আর এসব কৃষিকাজে ব্যবহার করা হতো দাসদের। সুতরাং যখন আব্রাহাম লিংকন দাসপ্রথা বিলোপের ঘোষণা দেন তখন এই অঞ্চলের মানুষের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে এবং তাদের মনে ধারণা হয় যে এটি তাদের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। একারণে দক্ষিণের ৭টি রাজ্য (সাউথ ক্যারোলিনা, মিসিসিপি, ফ্লোরিডা, অ্যালাবামা, জর্জিয়া, লুইজিয়ানা ও টেক্সাস) আমেরিকান ইউনিয়নের বিপক্ষে চলে যায়।
১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত চলা চার বছরব্যাপী আমেরিকার এই গৃহযুদ্ধের সূচনা ঘটে ১৮৬১ সালের ১২ এপ্রিল। সাউথ ক্যারোলিনার ফোর্ট সামটার দুর্গে অবস্থানকারী এক ফেডারেল বাহিনীকে আক্রমণ করে কনফেডারেট বাহিনী। এই দুর্গ পুনরুদ্ধারের জন্য প্রতিটি অঙ্গরাজ্য হতে সৈন্য সরবরাহের ডাক দেন আব্রাহাম লিংকন। পরবর্তীতে আরো চারটি রাজ্য (ভার্জিনিয়া, আরকানসাস, নর্থ ক্যারোলিনা ও টেনেসি) কনফেডারেসিতে যোগ দেয়।
৪ বছরের এই গৃহযুদ্ধে ঐতিহাসিক বেশ কিছু যুদ্ধ হয় যেমনঃ ব্যাটল অফ বুল রান (মানাসাস),ব্যাটল অফ আন্তিয়েতাম, ব্যাটল অফ চ্যান্সেলরভিল, ব্যাটল অফ গেটিসবার্গ, ব্যাটল অফ ভিকসবার্গ এবং আরও অনেক।
১৮৬৩ সালের ১ জানুয়ারি কার্যকর হয় লিংকনের বিখ্যাত ‘Emancipation Proclamation’ যার ফলে সকল দাসদাসী আইনগতভাবে দাসত্ব থেকে মুক্তি পায়।
পরবর্তীতে লিংকনের ইউনিয়ন বাহিনী পশ্চিমাঞ্চলে কনফেডারেট নৌবাহিনীকে ধ্বংস করে এবং তারপর পশ্চিমাঞ্চলের কনফেডারেট বাহিনীর বৃহৎ অংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ইউনিয়ন বাহিনীর ভিকসবার্গ দখলে কনফেডারেসি মিসিসিপির দুইপাশে দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ইউনিয়ন সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর দখল নেয় এবং নৌ-অবরোধ সৃষ্টি করে, ফলশ্রুতিতে দক্ষিনের অর্থনীতি একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। জুন ২২, ১৮৬৫ সালে এই যুদ্ধ শেষ হয়। ইউনিয়ন বাহিনী যুদ্ধে জয়লাভ করে।
৪ বছর ব্যাপী এই যুদ্ধে আমেরিকার ২৪ লাখ সৈন্যের মধ্যে ৬ লাখেরও বেশি সৈন্য মারা যায় এবং অসংখ্য হতাহত হয়। দক্ষিনের বেশীরভাগ স্থাপনা ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। কনফেডারেসি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয় এবং একই সাথে শুরু হয় জাতীয় ঐক্য এবং সদ্য স্বাধীন দাসদের তাদের প্রতিশ্রুত অধিকার দেবার অত্যন্ত কঠিন পুনঃনির্মান প্রক্রিয়া।