মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রতিদিনের। একটি দিবস দিয়ে এটি পূর্ণ হয় না বা প্রকাশ করা যায় না। তারপরেও মায়ের প্রতি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর পালিত হয় মা দিবস। তবে মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে কীভাবে এলো এই মা দিবস।
একটি গোষ্ঠীর মতে, এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে, যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেলের উদ্দেশে পালন করা হতো একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুবের সময়ে এবং তারপর রোমে ১৫ থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি পালিত হতো।
কিন্তু বিশ্বজুড়ে এই যে বর্ণাঢ্য ‘মা দিবস’-এর উদযাপন, এটি আসে মূলত আমেরিকানদের থেকে। ১৮৭০ সালে সমাজসেবী জুলিয়া ওয়ার্ড হো আমেরিকার নারীদের যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান, সঙ্গে এই দিবসটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের কাছে প্রচুর লেখালেখি করেন। যদিও এটা হোর মৌলিক পরিকল্পনা ছিল না, তিনি ১৮৫৮ সালে শান্তিকর্মী অ্যান জার্ভিসের শুরু করা প্রচেষ্টাকেই সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
অ্যান জার্ভিস যুদ্ধবিধ্বস্ত আমেরিকার নারীদের নিয়ে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং উপকারিতা নিয়ে প্রচার ও কাজ শুরু করেছিলেন। ১৮৬৮ সালে তিনি নারীদের সংঘবদ্ধ করেন এবং আমেরিকার কিছু কিছু জায়গায় প্রচারণা চালান। মৃত্যুর পর তার মেয়ে অ্যানা জার্ভিস মায়ের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের কাজে হাত দেন।
১৯১২ সালে অ্যানা জার্ভিস ‘মাদারস ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) গঠন করেন। এমনকি তিনিই ‘মে মাসের দ্বিতীয় রোববার’ আর ‘মা দিবস’ এই দুটি শব্দের বহুল প্রচারণা চালাতে সক্ষম হন। বিফল হয়নি তার ওই প্রচেষ্টা। তিনি চেষ্টা করতে লাগলেন একটি বিশেষ দিন ঠিক করে মা দিবসটি উদযাপন করার জন্য। সেই লক্ষ্যেই ১৯০৮ সালের ১০ মে তিনি পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফিটন শহরের সেই চার্চে, যেখানে তার মা অ্যান জার্ভিস রোববার পড়াতেন সেখানে প্রথমবারের মতো দিনটি উদযাপন করলেন।
এরপর থেকেই আস্তে আস্তে সময়ের সঙ্গে এটি বিস্তার হতে থাকে চারধারে এবং এক সময় আমেরিকার ৪৫টি অঙ্গরাজ্যে এই দিনটি পালন হতে থাকে।
১৯১২ সালে সর্বপ্রথম এই দিনকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় আমেরিকার কিছু কিছু অঙ্গরাজ্যে। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় আনুষ্ঠানিকভাবে মা দিবসের যাত্রা।
১৯৬২ সালে এই দিবসটি আন্তর্জাতিক দিবসের স্বীকৃতি পায়। পৃথিবীর বহু দেশ তখন দিবসটি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পালন করা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানিসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে।
এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস দ্বারা দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমানে বেশিরভাগ দেশেই মা দিবস হলো একটি সাম্প্রতিক রীতি।
ভাবছেন মা দিবসে কি দেওয়া যায় মাকে? এদিন মায়ের হাতে তুলে দিতে পারেন তার প্রিয় রঙের শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ। উপহারের তালিকায় থাকতে পারে অর্নামেন্টস, ওয়ালেট, কফি মগ, জুতো কিংবা স্ন্যাকস ট্রে’র মতো সামগ্রী। এছাড়া মাকে চমকে দিয়ে তার প্রিয় খাবারটি নিজের হাতে রান্না করে পরিবেশন করতে পারেন।