প্রায় ৪০০ বছরের সাম্রাজ্য শেষে উদ্ভব হয় চায়নার। চায়না সভ্যতার সময় সীমাটা ২৫০ বছরের। এই ২৫০ বছরে চায়না নিজেকে কতটা শক্তিশালী ও উন্নত করেছে তার প্রমাণ আমাদের হাতের ঘড়ি কিংবা ক্যালকুলেটরে পাওয়া যায়। কিভাবে? একটু কষ্ট করে হাতের ঘড়ি কিংবা ক্যালকুলেটরটাকে উল্টালে দেখা যাবে Made in China। তাই, উন্নত জাতি হিসেবে নিজেদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য চায়নাদের এক অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে চায়নাটাউন।
চাইনিজরা বহু আগে থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ায় আগ্রহী ছিল। ১৮৬০ সালের কনভেনশন অব পেকিং চুক্তির পর চাইনিজদের মাইগ্রেশনের পরিমাণ বেড়ে যায়। চায়না ও তাইওয়ানের বাইরের কোন স্থানে দীর্ঘকাল ধরে চাইনিজরা বসতি গড়ে তুললে সেই স্থানকে চায়নাটাউন বলা হয়ে থাকে। ১৫৯৪ সাল থেকে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় যে চায়নাটাউনটি রয়েছে তা পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো চায়নাটাউন। এর নাম বিনোন্দো।
মূলত নতুন দেশের নতুন সংস্কৃতির সাথে চাইনিজদেরকে পরিচিত করার জন্য এসব চায়নাটাউন গড়ে উঠেছিল। অনেক চায়নাটাউনেরই লম্বা ইতিহাস আছে। জাপানের নাগাসাকি, ফিলিপাইনের বিনোন্দো আর ভিয়েতনামের হোই আন চায়নাটাউন সেই ১৬০০ শতাব্দীর দিকে স্থাপিত। ভারতের কলকাতায় ১৭৮০ সালে চায়নাটাউন স্থাপিত হয়। এছাড়া মুম্বাইতেও আছে।
ইংল্যান্ডের লিভারপুলে বন্দরের কাছে উনবিংশ শতাব্দীতে হয় ইংল্যান্ডের প্রথম চায়নাটাউন। ১৮৫০ সাল থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে গড়ে উঠে স্যানফ্রান্সিসকো চায়না টাউন – যা উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় চায়নাটাউন। অর্থনৈতিক সুবিধার কারণে উত্তর আমেরিকায় গড়ে উঠে আরো ও অসংখ্য চায়নাটাউন – ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন, কলোরাডো, অ্যারিজোনা, শিকাগোসহ আরোও অনেক জায়গায়। নিউইয়র্ক, বোস্টন আর বাল্টিমোরের মতো উপকূলীয় এলাকায়ও গড়ে ওঠে চায়নাটাউন।
চায়নাটাউন চেনার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে চায়নাটাউনের প্রবেশপথের গেট ও গেটে চীনা ভাষায় লেখা কিছু শব্দ।
খাবার :
চায়নাটাউনে চাইনিজদের ঐতিহ্যবাহী খাবার দেখা যায়। এসব খাবারের দোকান চাইনিজ সংস্কৃতিকে ধারণ করে। চাইনিজদের বিভিন্ন ধরণের পেস্ট্রি আছে যা খুব জনপ্রিয়। যেমন লংগেভিটি পিচেস। এটি আসলে কোন ফল নয় বরং এক প্রকার চাইনিজ পেস্ট্রি যা চাইনিজরা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তৈরি করে। বিভিন্ন খাবারের মধ্যে আছে বাও এন্ড মানটুও, এটি প্রায় দু’হাজার বছর পুরানো। বাকওয়া – এক প্রকার বার্বিকিউ করা মাংস। বিভিন্ন ধরণের কেক যেমন মুন কেক বেশ জনপ্রিয়।
উৎসবঃ
চন্দ্রপঞ্জিকা দেখে এরা উৎসব পালন করে। সারা বছরে অনেক উৎসব আছে। এসব উৎসবের সময় গোটা চায়নাটাউন রঙিন হয়ে ওঠে। চাইনিজরা সাজে বিভিন্ন রূপে। চন্দ্রপঞ্জিকা অনুসরণ করায় প্রতি বছরই এসব উৎসবের তারিখ পরিবর্তন হয়। চাইনিজ নিউ ইয়ার – ১ম চন্দ্রমাসের ১ম দিনে পালিত হয়। এই বছর ১৯ ফেব্রুয়ারিতে হয় চাইনিজ নিউ ইয়ার । বিভিন্ন দেবতা বা মহান আত্মার জন্মদিনও পালন করে যেমন গড অব ওয়েলথ এর জন্মদিন ১ম চন্দ্র মাসের ৫ম দিন। ২০১৫ সালে তা ২৩ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। এছাড়া উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে Lantern উৎসব পালিত হয় ১ম চন্দ্র মাসের ১৫ তারিখ আর ড্রাগন বোট Festival হয় ৫ম চন্দ্রমাসের ৫তারিখ।যা ছিল ২০১৫ সালের ২০ জুন।