তোমাদের সবার অক্টোপাস পল এর কথা মনে আছে? ২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় পলের ভবিষ্যৎবাণী যেন প্রত্যেক ম্যাচেই সত্যি হচ্ছিলো! কি আজব ছিল ব্যাপারটা, তাই না?
আজ আমরা এই অক্টোপাস সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করবো।
অক্টোপাস শব্দটি গ্রীক শব্দ Oktapous শব্দ থেকে এসেছে এবং যার অর্থ আট পা। অক্টোপাসের আটটি পা ও বাহু রয়েছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, অক্টোপাসের তিনটি হৃদপিণ্ড রয়েছে। এর মধ্যে দুইটি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে ও অন্যটি বাকি দেহে। আমাদের রক্তে যেমন হিমোগ্লোবিন থাকে তেমনি তাদের রক্তে থাকে হিমোছায়ানিন(Hemocyanin )। তাই, তাদের রক্তের রং লালের পরিবর্তে নীল হয়।
অক্টোপাসের দৃষ্টিশক্তি প্রখর। এর জন্য তারা সহজেই গভীর জলে শিকার ধরতে পারে। Pacific সাগরে বড় প্রজাতির অক্টোপাস দেখতে পাওয়া যায়, দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩ ফুট ও ওজনে প্রায় ২০০ কেজি।
অক্টোপাসের আত্নরক্ষার কৌশল বেশ অদ্ভুত। এরা ইচ্ছেমত নিজের দেহের রং পরিবর্তন এবং মাথার নিচের নলাকার ফানেল জলপূর্ণ করে দ্রুতবেগে বের করে দিয়ে তাড়াতাড়ি দূরে সরে যেতে পারে। রং পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতলের বালি, পাথর, উদ্ভিদ ইত্যাদির সাথে এমনভাবে মিশে যেতে পারে যে হাঙ্গর, ইল, ফিন (অক্টোপাসের প্রধান শত্রু) খুব কাছ থেকেও একে সনাক্ত করতে পারে না। এছাড়া, অক্টোপাসের দেহে কালি থলে(ink sac) থাকে যার সাহায্যে অক্টোপাস নিজের দেহ থেকে ঘন কালো কালি ছুঁড়ে দিতে পারে যা শত্রুকে কিছুক্ষণের জন্য অন্ধ করে দেয়। এ কালির আরেকটি গুণ হচ্ছে এটি শত্রুর ঘ্রাণশক্তিও কিছুক্ষণের জন্য নষ্ট করে দেয়। ফলে অক্টোপাসটি পালিয়ে যেতে পারে। কালির মূল উপাদান হচ্ছে মেলানিন (Melanin )।
শেষ পর্যন্ত আত্নরক্ষার কোন উপায় না পেলে অনেক সময় এরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে অথবা নিজের বাহু খেতে আরম্ভ করে! অক্টোপাস খুব দ্রুত গতিতে ছুটতে পারে যা এটির আত্নরক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
অক্টোপাসের একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল রং বা বর্ণ পরিবর্তনের ক্ষমতা। এর ত্বকে আঁচিলের মত ফুস্কুড়ি থাকে। ত্বকের নিচে অনেকগুলি ক্রোমাটোফোর(Chromatophore) আছে। ক্রোমাটোফোরে নানা রঙের কোষ থাকে। এসব কোষের সাহায্যে এরা দেহের রং পাল্টায়।
অক্টোপাসের প্রধান খাদ্য সমুদ্রের ছোট মাছ ও কাঁকড়া। অক্টোপাস তাদের মুখের লালার মাধ্যমে শিকার ধরে খায়।
অক্টোপাসের দেহে কোন হাড় নেই। এরা তাদের নিজের মতো করে শরীর সংকুচিত ও প্রসারিত করতে পারে।