বেশ কিছুক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলেই দেখা যায় মাথাব্যথা বা চোখ জ্বালা করে, অথবা কোমরে ব্যথা শুরু হয়, কিছুক্ষণ অংক করার পর পরের অংকগুলো আর কিছুতেই মাথায় ঢুকে না, এ ধরণের বিভিন্ন রকমের কাজ করার সময় বিভিন্ন সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হয় আমাদের। কারও বেশী, আবার কারও এসব সমস্যা কম পোহাতে হলেও বেশীক্ষণ কোন কাজ করলে মোটামুটি সবাই কোন না কোন শারীরিক বাধা পেয়ে থাকেন। একেক কাজ করার নিয়ম একেক রকম, যেভাবে আমরা খাই, সেইভাবে বসে পড়াশোনা করলে চলবে না, আবার খেলাধুলা করার সময় খাওয়া-দাওয়া করলেও চলবে না। সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, এই নিয়মগুলো মেনে চললে যেকোনো কাজে দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব এবং একটানা কাজ করার ফলে সৃষ্ট ক্লান্তি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কর্মদক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে যেকোনো বস্তুর সাহায্যে অথবা ছাড়াই যেকোনো কাজ করার বিশেষ কৌশলকে আর্গনোমিক্স (Ergonomics) বা কর্মদক্ষতার বিদ্যা বলা হয়।
যেকোনো কাজ করার সঠিক কৌশল অবলম্বন না করলে যেকোনো ধরণের শারীরিক অসুস্থতা বোধ হতে পারে এবং তা মারাত্মক কোন রোগে পরিণত হতে পারে। যেমন দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় ধরে বাঁকা হয়ে বসে কম্পিউটারে কাজ করতে থাকলে মেরুদণ্ড বেঁকে গিয়ে প্যারালাইসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, মানসিক হোক বা শারীরিক, যেকোনো কাজ করতে হলে তা সঠিক কৌশল মেনেই করতে হবে।
আর্গনোমিক্স মূলত যেকোনো কাজের সাথে মানুষের সম্পর্ক স্থাপন করতে ব্যবহার করা হয়। আর্গনোমিক্সের তিনটি ভাগ রয়েছে- শারীরিক, মানসিক, এবং সামাজিক। এছাড়াও আরও কিছু ভাগ রয়েছে যাদের মধ্যে একটি হল পরিবেশের সাথে মানুষের সম্পর্ক। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে পরিবেশ নোংরা না করা, রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় নিয়ম-কানুন মেনে চলা ইত্যাদি। পথচারী এবং গাড়ির চালকদের এইসব নিয়ম-কানুন জানা না থাকলে যেকোনো সময়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
শারীরিক আর্গনোমিক্স মেনে চলা মানুষের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর্থ্রাইটিস, প্যারালাইসিস, ইত্যাদি রোগ এসব সঠিক নিয়ম না মেনে শারীরিক পরিশ্রম করার ফলেই হয়ে থাকে। চেয়ারে বসে কাজ করলে সবসময় পিঠ সোজা করে বসতে হবে। একটানা অনেকক্ষণ কাজ না করে কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর পর বিরতি নিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করে আবার কাজে বসতে হবে। একটানা কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে না থেকে একটু পর পর চোখ সরিয়ে বাইরে তাকাতে হবে। নিজেকে অতিমানব মনে করে খুব ভারী কোন বস্তু একা তুলতে যাওয়া খুবই বোকামি। কারণ শরীরের তুলনায় বেশী ভারী কোন বস্তু তুলতে গেলে ঘাড়ের রগ বা মেরুদন্ডে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকলে প্রতিদিন ২ ঘণ্টার বেশী ব্যায়াম না করাই ভালো। বেশী শারীরিক পরিশ্রম করা হলে পুষ্টিকর খাবার যেমন ডিম, ফল, দুধ ইত্যাদি খেতে হবে এবং প্রচুর পরিমানে পানি খেতে হবে।
মানসিক আর্গনোমিক্স মস্তিষ্কের কাজের সাথে শরীরের সম্পর্ক স্থাপন করে। অনেকক্ষণ ধরে পড়াশোনা করলে অনেকেরই মাথাব্যথা শুরু হয়। মস্তিষ্ক পরিশ্রম করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে বলেই এমনটা ঘটে। মস্তিষ্কের সবচেয়ে বেশী পরিশ্রম হয় কোন কিছু উদ্ভাবন বা কোন যুক্তি নিয়ে চিন্তা করতে গেলে। এসব ক্ষেত্রে একটানা অনেকক্ষণ চিন্তা না করে কিছুক্ষণ পর পর বিরতি দিয়ে চিন্তা করলে আর ক্লান্তি আসবে না। একটানা বিরতিহীন মস্তিষ্কের কাজ শরীরকেও ক্লান্ত করে ফেলে এবং কর্মদক্ষতা কমিয়ে আনে।
সামাজিক আর্গনোমিক্স মূলত আমাদের আশেপাশের পরিবেশের সাথে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হবে তা শিখিয়ে থাকে। একসাথে দলবদ্ধ হয়ে কোন কাজ করতে গেলে অনেকেই ভীতি বোধ করেন, আবার অনেকের স্রেফ অনীহা থাকে সবার সাথে মিশতে। এ ধরণের মানুষেরা যেকোনো কাজে দক্ষ হলেও শুধুমাত্র নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন না দেখে তাঁদের দক্ষতা ঢাকা পড়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে তাঁদের আগে নিজের চিন্তাধারা বদলানো উচিত। সবাইকে অপরিচিত মনে না করে পরিচিত ভেবে একসাথে কাজ করার চেষ্টা করা উচিত। দলবদ্ধ কাজে প্রত্যেকের মতামতের যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া উচিত। কারও প্রতি কম, কারও প্রতি বেশী নজর দিলে পুরো কাজের ধারা নষ্ট হয়।