ক্রিকেট ভালবাসে না এমন কিশোর বা তরুণ আমাদের মাঝে কমই আছে। বিশেষ করে ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের নতুন রাজত্ব এই খেলাকে আমাদের মাঝে আরও জনপ্রিয় করেছে। ক্রিকেট বিশ্বে একচ্ছত্র আধিপত্য করে যাচ্ছে যে কয়টি দেশ, তাদের মধ্যে অন্যতম হল ভারত। সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেব থেকে শুরু করে শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী কিংবা মহেন্দ্র সিং ধোনি এখন সারা পৃথিবীতেই সুপরিচিত। ধীরে ধীরে ক্রিকেটকে এই দলটি নিয়ে যাচ্ছে আরও নতুন এক স্থানে। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের একদল প্রযুক্তিবিদ্যার ছাত্র মিলে এমন এক নতুন আবিষ্কার করেছেন, যার ফলে এই দেশটির জন্য ক্রিকেট বিশ্বে রাজত্ব করা আরও সহজ হয়ে পড়বে।
যারা একেবারেই ক্রিকেট বোঝে না, অন্তত তারাও জানে যে ক্রিকেট খেলায় বোলার এবং ফিল্ডারদের লক্ষ্য থাকে ব্যাটসম্যানকে আউট করা। ব্যাটসম্যান যতভাবে আউট হতে পারেন, তার মধ্যে বেশ দুঃখজনক একটি আউট হল কট বিহাইন্ড (Caught behind)। বোলার বল ছোঁড়ার পর ব্যাটসম্যানের লক্ষ্য থাকে বলটি ব্যাট দিয়ে মেরে দূরে পাঠানো। অনেক সময়েই বল ব্যাটে না লেগে পেছনে উইকেট কিপারের হাতে চলে যায়, বা ভাগ্য বেশী খারাপ হলে সোজা ষ্ট্যাম্প উড়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় বল ব্যাটের কিনারায় লেগে কিপারের হাতে সোজা চলে গেলে ব্যাটসম্যান কট আউট হয়ে যান, আর এই আউটকে কট বিহাইন্ড বলে।
কট বিহাইন্ড হয়ে আউট হওয়াটা সব ব্যাটসম্যানদের জন্যই খানিকটা আফসোসের। বিশেষ করে ২০১১ এবং ২০১২তে ভারতের টেস্ট ম্যাচগুলোতে কট বিহাইন্ড আউটের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলছিল। তো এই আফসোসের আউট হওয়ার হার কমাতে মুম্বাইয়ের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির ছাত্র মিরিক গোগরি, আয়ু্স জেইন এবং তাঁদের বন্ধুরা মিলে তৈরি করেছেন এমন এক মাপের ব্যাট, যা দিয়ে খেললে কট বিহাইন্ড হবার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। এর নাম দেয়া হয়েছে গ্লেডিয়াস (Gladius)। যদিও আইসিসি এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে, কিন্তু এখনও তারা কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি বলে সবাই আশা করছেন হয়তো খুব শীঘ্রই ভারতীয় ক্রিকেট দল এই ব্যাটের ব্যবহার শুরু করবে।
গোগরি ও তাঁর দল যে এই ব্যাটে খুব অবাক করার মতো কিছু করেছেন তা কিন্তু না। তাঁরা শুধু ব্যাটের আকার এবং মাপে খানিকটা পরিবর্তন এনেছেন। প্রথমেই তাঁরা ব্যাটটিকে তুলনামুলকভাবে বেশ পাতলা করেছেন। ক্রিকেটের নীতি অনুসারে ব্যাটের প্রস্থ ১০.৮ সেঃ মিঃ-এর বেশী হতে পারবে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গোগরি ও তাঁর দল ব্যাটের পেছনের দিক ১০.৮ সেঃ মিঃ রেখেছেন ঠিকই, কিন্তু সামনের দিকে এর প্রস্থ ০.৭৫ সেঃ মিঃ কমিয়ে এনেছেন। সেই সাথে ব্যাটের কিনারার উঁচু অংশটুকু তাঁরা একেবারে সমান না করে খানিকটা খাঁজকাটা করে দিয়েছেন, যার ফলে ব্যাটের কিনারায় লেগে বল পেছনে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে।
সাধারণ ব্যাটের কিনারায় বল লাগলে সাধারণত তা একদিকেই চলে যায়, তা হলো লম্বালম্বিভাবে কিপারের দিকে। কিন্তু গ্লেডিয়াসের কিনারাখাঁজকাটা হওয়ার কারণে বল কিনারায় লাগলেও তা সোজা পেছনে না গিয়ে একেকবার একেকদিকে চলে যায়। এছাড়া সামনের দিকের প্রস্থ কমিয়ে আনার কারণে ব্যাটের ওজন আগের চেয়ে খানিকটা কমেছে, যার ফলে এর ভারসাম্য ঠিক রাখাও সহজ হয়েছে। অনেকের ধারণা বল দূরে পাঠানোর জন্য ব্যাট ভারী হওয়া জরুরী, আসলে সঠিক কোণে এবং শক্তি নিয়ে মারলে হালকা ব্যাট দিয়েও একইভাবে বল দূরে পাঠানো সম্ভব।
গ্লেডিয়াস তৈরি করার পর এর আবিষ্কারকরা পরীক্ষামূলকভাবে এই ব্যাটটি বেশ কয়েকজন স্থানীয় খেলোয়াড়দের হাতে দিয়েছেন এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য। খেলোয়াড় ছাড়াও ব্যাটটি বেশ কয়েকজন কোচের হাতে দেয়া হয়েছে, এবং সবারই একই মত যে গতানুগতিক ব্যাটের চেয়ে এই ব্যাট দিয়ে খেলা বেশ সহজ। এখন গ্লেডিয়াসের সৃষ্টিকর্তারা যা নিয়ে চিন্তায় আছেন তা হলো কীভাবে তাঁরা ব্যাটসম্যানদের বোঝাবেন যে তাঁদের গতানুগতিক ব্যাটের চেয়ে গ্লেডিয়াস অনেক ভালো কাজ করবে। এটা কঠিন এই জন্যই, কারণ বেশীরভাগ খেলোয়াড়রাই ১০.৪ সেঃ মিঃ প্রস্থের ব্যাট দিয়ে খেলে অভ্যস্ত, সুতরাং হঠাৎ করে তাঁরা ১০.৮ সেঃ মিঃ প্রস্থের ব্যাট দিয়ে খেলতে রাজি নাও হতে পারেন। এখন দেখার অপেক্ষা এটাই যে এই ব্যাট ভারতীয় ক্রিকেট টিম গ্রহণ করে কিনা বা করলেও এটা তাঁদের কতটা কাজে দেয়।
সূত্র : ইএসপিএন ক্রিকইনফো