গ্লাস দিয়ে গান

বিজ্ঞান নিয়ে অনেকের মনেই ভয়ভীতি থাকে। জটিল সব সূত্র, গাণিতিক ব্যাখ্যা আর কাঠখোট্টা সব শব্দ শুনলেই কেমন যেন ভয় ভয় লাগে। জটিল সব ঘটনাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে সহজভাবে তুলে ধরার কাজটিই করছে সায়েন্স রকস টিভি অনুষ্ঠানটি। প্রতি সপ্তাহে ২টি করে ৫২ সপ্তাহে মোট ১০৪টি মজার মজার সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট দেখানো হবে তোমাদের আর বলে দেয়া হবে সেটা কেন হলো, কিভাবে হলো। আজ এক ঝলক জেনে নেয়া যাক সায়েন্স রকস টিভি অনুষ্ঠানের একাদশ পর্বে দেখানো ‘Singing Glass’  বা ‘গ্লাস দিয়ে গান’ এক্সপেরিমেন্টটি।

গান শুনতে আমাদের সবারই ভালো লাগে। তাই অবসর সময়ে আমরা গান শুনতে পছন্দ করি। প্রায় সময়ই আমাদের কানে থাকে ইয়ারফোন। গানকে আরো শ্রুতি মধুর করতে আমরা ব্যবহার করি গিটার, কীবোর্ড, ড্রামস, বাঁশি, তবলা, পিয়ানো এইরকম আরও অনেক বাদ্যযন্ত্র। কিন্তু আমি যদি বলি শুধু এসব বাদ্যযন্ত্র কেন অন্য কিছু দিয়েও আমরা এমন সুর‍ তুলতে পারি তাহলে কিন্তু মিথ্যা বলা হবেনা। আজ আমরা দেখাব পানির গ্লাস ব্যবহার করে কীভাবে বিভিন্ন সুর তোলা যায়।

যা যা লাগবেঃ

১) পানি

২) গ্লাস (চারটা একই আকারের)

3) চামচ

৪) ওয়াইন গ্লাস

 

যেভাবে করবোঃ

প্রথমে চারটি গ্লাস পাশাপাশি রেখে চামচটা দিয়ে হাল্কা করে প্রতিটা গ্লাসের কিনারায় আঘাত কর। দেখবে প্রতিটা গ্লাস থেকে একই রকম শব্দ উৎপন্ন হচ্ছে। এবার গ্লাসে বিভিন্ন পরিমাণ পানি নিতে হবে; ধরো প্রথম গ্লাসে ১০০ মিঃলিঃ, দ্বিতীয় গ্লাসে ১৫০ মিঃলিঃ, তৃতীয় গ্লাসে ২০০ মিঃলিঃ, চতুর্থ গ্লাসে ২৫০ মিঃলিঃ পানি নিবে। এবার চামচ দিয়ে যেকোন এক দিক থেকে গ্লাস গুলো হালকা আঘাত করা শুরু কর। দেখা যাবে আগের মতো একই শব্দ উৎপন্ন হচ্ছে না এবং কম পানি থেকে বেশি পানির দিকে কিংবা বেশি পানি থেকে কম পানির দিকে শব্দ ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে।

এবার ওয়াইন গ্লাসে কিছু পরিমাণ পানি নিয়ে হাতের একটা আঙুল ভিজিয়ে এর কিনারার উপর হালকা করে স্পর্শ করে ঘুরাতে থাকি। কি ঘটছে দেখ! সুন্দর একটা শব্দ উৎপন্ন হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন পিয়ানো বাজাচ্ছে।

 

কেন হলোঃ 

আমাদের আগে জানতে হবে শব্দ কি। শব্দ এক ধরণের যান্ত্রিক তরঙ্গ যা কোন মাধ্যমের ভেতর দিয়ে এসে আমাদের কানে শ্রবণের অনুভূতি সৃষ্টি করে। কঠিন, তরল বা বায়বীয় যেকোন একটি শব্দ তরঙ্গের মাধ্যম হতে পারে। আমরা যখন চামচ দিয়ে গ্লাসে আঘাত করি তখন দুই বস্তুর মধ্যে আঘাতের ফলে কম্পনের সৃষ্টি হয় যা  যান্ত্রিক তরঙ্গের সৃষ্টি করে। এ তরঙ্গ বাতাসের কণা সমূহকে আন্দোলিত করে। আর এ আন্দোলন আমাদের কানে পৌছালে আমরা শব্দটা শুনতে পাই।

আমরা যখন গ্লাসে পানি নিয়ে শব্দ উৎপন্ন করলাম তখন উৎপন্ন শব্দের পরিবর্তন ঘটে। আমরা যে গ্লাসে যত বেশি পানি নিয়েছি সে গ্লাসের ভর তত বেশি হয়েছে। আর যে গ্লাসের ভর যত বেশি সে গ্লাস ততো বড় কম্পাংকে কম্পিত হতে থাকে এবং বাতাসে বড় তরঙ্গ দৈর্ঘের তরঙ্গ সৃষ্টি করে।শব্দের তরঙ্গ দৈর্ঘ যত বড় হয় শব্দের পিচ ততো ছোট হয়। অর্থাৎ বেশি এবং কম পানিপূর্ণ গ্লাসের অবস্থা আমরা শব্দ থেকে বুঝতে পারি।

আমরা যখন গ্লাসের রিমের উপর আঙুল ঘুরায়, আঙ্গুলের সাথে গ্লাসের রিমের ঘর্ষণের ফলে শব্দের সৃষ্টি হয় এবং বাতাসের মাধ্যমে আমাদের কানে এসে পৌছায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন