দুঃখজনক হলেও সত্যি যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র, দুর্ঘটনা ইত্যাদি নানা কারনে সমগ্র বিশ্বে লাখ লাখ শিশু পিতৃ-মাতৃহীন অবস্থায় জীবন-যাপন করছে। অনেকে থাকছে পরিবারের বাকি সদস্যদের সাথে কিন্তু এমন অনেক পিতৃ-মাতৃহীন শিশুরা বেড়ে উঠছে অনাথ আশ্রমগুলোতে।
এই শিশুরাও যে সমাজের একটি অংশ, তাদেরও অধিকার আছে এই সমাজে, তাদের অবস্থান যেন ভুলে না যাওয়া হয় সেজন্য প্রতি বছর নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সোমবার শুধুমাত্র ওদের জন্য 'ওয়ার্ল্ড অরফ্যান ডে' পালন করা হয় বিশ্বজুড়ে।
এই দিনটির অঙ্গীকার বাবা-মা হারা শিশুদের অধিকার আদায়। তাই এই দিনটিতে মানুষকে সক্রিয়ভাবে অনাথ শিশুদের জন্য সচেতনতা, সমর্থন ও তহবিল বাড়ানোর জন্য উৎসাহী করা হয়।
আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বপ্রথম রোমানরা অনাথ শিশুদের প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করে। ৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রোমানরা প্রথম অনাথ আশ্রম বা এতিমখানা তৈরি করে। ইহুদি ও এথেনিয়ানদের আইন ছিল প্রতিটি এতিম শিশুকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে লালন পালন করবে। মধ্যযুগীয় ইউরোপে অনাথ শিশুদের গির্জায় লালন পালন করা হত।
বর্তমানে গবেষকরা সর্বসম্মতিতে জানিয়েছেন, এতিমখানা বা অনাথ আশ্রমগুলোতে বাচ্চাদের সঠিক যত্ন নেওয়া হয় না, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঠিক মত হয় না। 'ওয়ার্ল্ড অরফ্যান ডে' তে বিভিন্ন সংঘ পশ্চিমা দেশের মানুষকে উৎসাহী করে দরিদ্র দেশগুলো থেকে পিতা-মাতাহীন শিশুদের দত্তক নেয়ার জন্য।
'ওয়ার্ল্ড অরফ্যান ডে' পালনের ধারনা সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠা করে স্টার ফাউন্ডেশন। তাদের এই দিনটি পালনের উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, যেন তারা এতিম শিশুদের জন্যও সামান্য হলেও যে কোন ধরনের সাহায্য করা।
প্রতি বছর পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংঘ অনাথ আশ্রমগুলোতে বাচ্চাদের জন্য নানান উপহার, শিক্ষা সামগ্রী, নানান নামী দোকানের খাবার পাঠায়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তহবিল সংগ্রহের বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়।
এতিমখানার বাচ্চাদের নানান জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মূলত এই দিনটি পালন করা হয়, অভিভাবকবিহীন শিশুদের প্রতি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য।
বাংলাদেশে ‘ফুডপান্ডা’ গত বছর স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার ২৮০ জন বাচ্চার সঙ্গে দিনটি পালন করে। গত বছর তাদের ক্যাম্পেইনটির নাম ছিল ‘feed an orphan’। তারা এতিম শিশুদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী ও চকলেট বিতরণ করে। ফুডপান্ডার পাশাপাশি ঢাকার বেশকিছু স্বনামধন্য রেস্তরাঁও এদিন শিশুদের জন্য খাবার পাঠায়।
অনেক মুসলিম রাষ্ট্রে রমজান মাসের ১৫ তারিখ 'অরফ্যান ডে' পালিত হয়।