অক্টোবর বিপ্লবকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত অঞ্চলগুলোতে দাপ্তরিকভাবে ডাকা হয় ‘মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব’ বলে। একই সাথে ঐতিহাসিক এই বিপ্লবকে লোহিত অক্টোবর, অক্টোবর উত্থান, বলশেভিক বিপ্লব, জার বিপ্লব ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়ে থাকে। ১৯১৭ সালের ২৫ অক্টোবর (জুলিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী) রাশিয়ার সাবেক পেট্রোগ্রাড শহরে (বর্তমান সেন্ট পিটার্সবার্গ) একটি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাশিয়ার ক্ষমতাসীন জার সম্রাটের পতন ঘটে এবং সমাজতন্ত্রের জন্ম হয়।
সে বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত ফেব্রুয়ারি বিপ্লবকে অনুসরণ করে শুরু হয়েছিল অক্টোবর বিপ্লব। ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ফলে পতন ঘটে জার সাম্রাজ্যের এবং একটি অস্থায়ী সরকার ক্ষমতা হাতে নেয়। অক্টোবর মাসে এই অস্থায়ী সরকারকে উৎখাত করে স্থানীয় সোভিয়েতরা ক্ষমতা দখল করে। তারা বলশেভিক পার্টিকে সমর্থন দিতে শুরু করে। এই বিপ্লবের নেতা ও প্রধান চালিকাশক্তি ছিলো শ্রমিক শ্রেণী এবং তারা গরিব কৃষকদের সাথে হাত মিলিয়েছিলো।
বিপ্লবের নেতৃত্বে ছিল বলশেভিকরা। ২৪ অক্টোবর থেকে তারা সরকারি ভবনগুলো দখল করা শুরু করে। তার পরদিনই তারা পেট্রোগ্রাড দখল করে নেয়। ১৯১৭ সালের ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় গর্জন করে উঠে “অরোরা” যুদ্ধজাহাজের কামান। শুরু হলো রুশ বুর্জোয়া সরকারের শেষ ঘাঁটি শীত প্রাসাদ বা উইন্টার প্যালেসের ওপর বিজয়ী আক্রমণ। একই সময়ে স্মোলনির সমাবেশ হলে উদ্বোধন হলো পেট্রোগ্রাড সোভিয়েতের জরুরি অধিবেশন। চূড়ান্ত স্পষ্টতা, সুনির্দিষ্টতা আর সাদাসিধে ভাষায় ভ্লাদিমির লেনিন ঘটনাবলীর সারসংক্ষেপ করলেনঃ ‘যে শ্রমিক ও কৃষক বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তার কথা বলশেভিকরা সর্বদা বলে এসেছে তা ঘটল’। অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক মহাবিপ্লব ছিলো সামাজিক বিকাশের, একচেটিয়া পুঁজিবাদের পরিস্থিতিতে শ্রেণিসংগ্রামের নিয়মসঙ্গত উপায়। এর বিজয়ে দেখা দিলো পৃথিবীতে প্রথম সমাজতন্ত্র অভিমুখী রাষ্ট্র।
অক্টোবর বিপ্লবের বিজয় রাশিয়াকে রাজনৈতিকভাবে একটি অগ্রসর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলো। এই বিপ্লব বিশ্বের এক-ষষ্ঠাংশ ব্যাপী বিশাল একটি দেশের জনগণকে পুঁজিবাদী দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিলো। এই বিপ্লব শ্রমিক শ্রেণী ও মেহনতি কৃষকের জন্য শুধু সামাজিক মুক্তিই আনেনি, রাশিয়ার জাতিগত ও সাধারণ গণতান্ত্রিক সমস্যাগুলোও সমাধান করতে সক্ষম হয়েছিলো।
তবে বিশ্বব্যাপী এই বিপ্লবকে গ্রহণ করা হয়নি যার ফলে ১৯১৭ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত রাশিয়াতে সংঘটিত হয় গৃহযুদ্ধ। অবশেষে ১৯২২ সালে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্ম হয়।
অল্প কিছু পরিবর্তন ছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়ন নীতিগত দিক থেকে মোটামুটি অপরিবর্তিত ছিল। কিন্তু আশির দশকের শেষের দিক থেকে বেশ কয়েকটি অঞ্চলে জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ঘটে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ কিছু নীতি হাতে নিলেও শেষরক্ষা হয়নি। ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং এরই সাথে বলশেভিক পার্টির প্রভাবও কমে যায়।