অনেকেই ধারণা করেন যে মাটির অভ্যন্তরে থাকা কয়লা থেকে সৃষ্টি হয় হীরা(Diamond)। তবে এই ধারনাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। হীরা গঠনে খুব সামান্যই অবদান রাখে কয়লা। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া যেসব ডায়মন্ড পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগের বয়সই ছিল পৃথিবীর স্থলভাগের প্রথমদিকের উদ্ভিদের চেয়েও বেশি। এই উদ্ভিদগুলোই ছিল পৃথিবীর কয়লার প্রধান উৎস, তাই কয়লার উপর নির্ভর করে যে ডায়মন্ড সৃষ্টি হয়নি এটা বোঝা যায়।
অনেক অনেক বছর আগে পৃথিবীর বুকে হীরার সৃষ্টি হয়। মাটির গভীরে প্রায় ১৪০-১৯০ কিলোমিটার নিচে উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপের মাঝে থাকা হীরার মূল আকরিকগুলো প্রবল অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ছিটকে বেরিয়ে আসে পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে। বাইরে আসার পর এরা শীতল হয়ে জমাট বাধে ও কিম্বারলাইট তৈরি করে। এখান থেকেই রাফ ডায়মন্ড পাওয়া যায়। মাটির নিচে এরা ৪৫-৯০ কিলোবার চাপে এবং ৯০০-১৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় থাকে।
মনে রাখা উচিত যে, কয়লা পৃথিবীর উদ্ভিদ থেকে মূলত সৃষ্টি হয়েছে এবং পৃথিবীর ভূত্বক থেকে গড়ে ৩.২ কিলোমিটার গভীরে অবস্থান করে। এই কয়লার পক্ষে আরো ১৫০ কিলোমিটার গভীরে যেয়ে ডায়মন্ড সৃষ্টি করার সম্ভাবনা খুবই কম। তাহলে ডায়মন্ড সৃষ্টির জন্য পৃথিবীর গভীরে কার্বন কিভাবে জমা হলো? আমরা জানি ডায়মন্ড কার্বনের বহুরূপ মৌল। হীরার কার্বনের উৎস খুঁজতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে পৃথিবীর গঠনকালের সময়ে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা যে, পৃথিবী গঠন হওয়ার সময়েই এর অভ্যন্তরে কার্বন আটকা পড়ে যায় এবং উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপে ধীরে ধীরে তা হীরায় পরিণত হয়।
তবে এটাই প্রকৃতিতে ডায়মন্ড সৃষ্টির একমাত্র উপায় নয়। যদিও প্রায় শতভাগ প্রাকৃতিক ডায়মন্ড এই প্রক্রিয়াতেই সৃষ্টি হয়, তারপরেও সামান্য পরিমান হীরা অন্যান্য উপায়েও তৈরি হয়ে থাকে। যেমন, অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে মহাকাশ থেকে উল্কাপাতের ফলেও সামান্য পরিমান ডায়মন্ড সৃষ্টি হয়। উল্কা (Asteroid ) পৃথিবীর বুকে আঘাত হানার সময় সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড তাপ ও চাপ। এই তাপ ও চাপ এতই উচ্চমাত্রার যে তা ডায়মন্ড গঠনের জন্যেও যথেষ্ট। উল্কা আঘাত হেনেছে এমন বেশ কিছু জায়গায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডায়মন্ড পাওয়া গেছে।
হীরার মূল্য কেমন হবে তা নির্ভর করে চারটি বিষয়ের উপর। যথা – রং কিরূপ, কীভাবে কাটা হয়েছে, কতটা স্বচ্ছ প্রকৃতির এবং কত ক্যারেট ওজনের। ক্যারেট স্বর্ণের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতার একক।
আফ্রিকায় হীরার প্রচুর খনি আছে।আফ্রিকার এইসব খনি থেকে প্রাপ্ত হীরাকে মাঝেমাঝে রক্ত হীরক বলা হয়। কেননা এ সব হীরা থেকে প্রাপ্ত অর্থ যুদ্ধ, হানাহানি, সন্ত্রাস ইত্যাদির অর্থায়নে ব্যবহৃত হয়। হীরাকে কেন্দ্র করে হলিউডের একটি চলচ্চিত্র রয়েছে যার নাম Blood Diamond। এই চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করেছেন Leonardo DiCaprio।