ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড গাথা

মা বলেছিলেন, কখনো চেলসি ছেড়ো না। এমনটাই বলছিলেন এই চেলসি তারকা। কিন্তু ২১শে সেপ্টেম্বর ভাগ্যের পরিহাসে চেলসির বিপক্ষেই খেলতে হল তাকে ম্যান সিটির হয়ে। এদিন ‌ল্যাম্পারদের বদৌলতে ১-১ গোলে ড্র হয়। তবে এই দিনে উল্লাস নয় বরং শান্ত থেকেই উদযাপন করেছেন। চোখে জল নেই তবে তার ভিতরকার অশ্রুপাত দর্শকরা ভালভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।

২০০১-২০০২ মৌসুমে অভিষেকের মধ্য দিয়ে চেলসিতে কাটিয়েছেন ১৩টি বসন্ত। হেসে খেলেই করেছেন মধ্য মাঠের রাজত্ব। কখন যে যুগের অন্যতম সেরা মধ্যমাঠের কারিগরে পরিণত হয়েছেন তা হয়ত তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি না। আসলে এ যুগের সেরা তারকা মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমাররা প্রচারমাধ্যমের প্রায় সব আলো কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু তাতে তার নৈপুণ্য ঢাকা পড়েনি।

চেলসির হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড তার দখলে। মধ্যমাঠ থেকে অসাধারন ফ্রি কিকে গোলরক্ষককে বোকা বানিয়েছেন বহুবার। তবে কাঙ্খিত সাফল্য আসে ২০০৪-২০০৫ মৌসুমে। ল্যাম্পার্ডের জোড়া গোলে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতে চেলসি। এটাই তার জীবনে্র প্রথম শিরোপা। সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতিও মেলে এই বছর। শুরুটা হয়েছিল ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড দিয়ে।

স্কুল ছাত্র ল্যাম্পার্ডকে যখন ওয়েস্ট হাম দলভুক্ত করা হল তখন সাংবাদিকরা কড়া সমালোচনা করে বলেছিলেন, এই খেলোয়াড় উপযুক্ত নয়। ১৬ বছর বয়সী ল্যাম্পার্ডের মুখ হতাশায় কুঁচকে গিয়েছিলো সেদিন। ক্লাব ম্যানেজার হ্যারি রেডন্যাপের মুখের বানীই ছিল ল্যাম্পার্ডের জন্য একমাত্র ভরসা। উত্তরে হ্যারি রেডন্যাপ সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন তার যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে। তবে বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি তার এই ভবিষ্যত বাণীর সত্যতা পেতে। অভিষেক ম্যাচেই ব্রাডফোর্ড সিটিকে দুই গোল দিয়েই জানান দিয়েছিলেন ব্রিটিশ কিংবন্তির আগমনী বার্তা।

২০০৯-১০ মৌসুমটা চেলসির জন্য যেমন সুখকর তেমনি ল্যাম্পার্ডেরও । ঐ বছর চেলসি এফএ কাপ, প্রিমিয়ার লীগ জেতে। ল্যাম্পার্ডও ওই মৌসুম নিয়ে তিন মৌসুমে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। যা চেলসির ইতিহাসেও প্রথম।১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবটিতে অনেক তারকা খেলোয়াড়ের পদচারনা করেছেন। ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড একমাত্র তারকা যিনি সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন। চেলসির হয়ে ৪২৭ ম্যাচে ১৪৭ বার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছেন।

২০০৮ সালের ৩০ এপ্রিলের লিভারপুল-চেলসি ম্যাচে “RIP Pat Lampard” লেখা একটা জার্সি যখন উঁচিয়ে ধরেন দ্রগবা, তখন সরব হয়ে উঠেছিল পুরো স্টামফোর্ড ব্রিজ। এই দিনই তার মা পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। মায়ের মৃত্যুর খবর শুনেও খেলেছেন তিনি এই ম্যাচ। কারণ মার অনুপ্রেরণায়ই এত দূর এসেছেন ল্যাম্পার্ড। ম্যাচে সমতাসূচক গোল করে কালো ফিতা উঁচিয়ে ধরেন।

চেলসি-ল্যাম্পার্ড সমার্থক শব্দ হয়ে উঠলেও ৮ নম্বর জার্সিধারী এই খেলোয়াড় চেলসি ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন নিউ ইয়র্ক সিটিতে। ২০১৫ সালের মেজর লীগ সকার খেলবেন এই দলে। তবে এখন ধারে খেলছেন ম্যান সিটিতে।  তবে সবকিছুর পরেও একটা কিন্তু থেকেই যায়, দিদিয়ের দ্রগবা যেভাবে আবার ফিরে এসেছেন তার পুরোনো ক্লাবে, সেভাবে কি আবারও ল্যাম্পার্ডকে দেখা যাবে তার পুরোনো ঠিকানায়?

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন