সন্তানের পিতা-মাতা হওয়া যতোটা গর্বের, তার চেয়েও গর্বের যদি তাকে সঠিকভাবে ভালো মানুষ তৈরি করতে পারেন। তাই সন্তান পরিপালন করার ক্ষেত্রে পিতা-মাতাদের খুবই আন্তরিক হতে হয়। আপনার একটি কথাই হয়তো আপনার সন্তানের ভবিষৎকে উল্টোপথে ধাবিত করতে পারে। তেমনই কিছু কথা রয়েছে যা সন্তানকে কখনও বলা উচিত না।
১। তোমার বয়সে আমি আরও দায়িত্বশীল ছিলাম
আপনার সন্তানকে তুলনা করা ও ঐ বয়সে আপনি কেমন দায়িত্বশীল ছিলেন সেটার উদাহরণ দেওয়া সবচেয়ে বড় ভুল। বরং আপনি কিভাবে আপনার সমস্যাগুলো দূর করেছিলেন সেটি ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে পারেন। তুলনা করলে সন্তানের মনে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে ও তার নিজের প্রতি আস্থার জায়গাটি দুর্বল হয়ে যায়। তাই তুলনা দেয়ার ভুলটি কখনও করবেন না।
২। তুমি সবসময় ভুল সিদ্ধান্ত নেও
আপনার সন্তানকে কখনও তার অপরিনত থাকার বিষয়ে বলবেন না। প্রতিটি মানুষই ভুল করতে পারে, আর ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা নিতে পারে। তাই তার ভুলকে দোষারোপ না করে বরং তাকে সঠিক পথ দেখান। কখনই আপনার সিদ্ধান্ত তার ঘাড়ে চেপে দিবেন না।
৩। তোমার ভাই/বোনের মতো হতে পারো না?
এটি আরেকটি বড় ভুল। আপনার সন্তানদের মধ্যে তুলনা করবেন না। কারণ সবাই একই সক্ষমতা নিয়ে জন্মায় না। তার নিজের সম্পর্কে কখনই ছোট করে দেখাবেন না। বরং তাকে আরও ভালো করার বিষয়ে ভালোভাবে বোঝান।
৪। আমাকে একা থাকতে দাও!
অভিভাবকদের সন্তান পরিপালনের দায়িত্বশীলতা অনেক। তাদের কাজ-কর্মের জন্য আপনাকে অনেক সময় দু:চিন্তায় পড়তে হতে পারে। নানা চিন্তায় আপনি একা থাকার প্রয়োজন বোধ করতে পারেন। সন্তানেরা সবসময় অভিভাবকদের এই বিষয়টি বুঝতে পারে না। তাই বলে কখনও আপনার সন্তানকে ‘আমাকে একা থাকতে দাও!’ এই কথাটি বলবেন না। এতে তারা অবহেলিত বোধ করে ও বিষন্ন হয়ে পড়ে। তাই সহনশীলতা দেখান ও তাদেরকে কোনও খারাপ কিছু বলবেন না।
৫। নিজের জন্য তোমার লজ্জিত হওয়া উচিত
এটি সন্তানের উপর বড় ধরণের বিরুপ প্রভাব ফেলে। সে খারাপ কাজ করতেই পারে। আর না বুঝেই এটি করে থাকে। সন্তানকে ভালো-মন্দ বোঝানোর জন্য অনেক ভালো ও কোমল উপায় আছে।
৬। তুমি তোমার মা/বাবার মতো
প্রতিটি স্বামী-স্ত্রী একসাথে বসবাসের ক্ষেত্রে সুখী থাকবে এমনটি নয়। যার ফলে তাদের একে অপরের প্রতি অনেক সময় খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। কিছু কিছু সম্পর্কে বিচ্ছেদও ঘটে থাকে। তাই বলে সন্তানকে আপনার স্বামী/স্ত্রী সম্পর্কে খারাপ কথা বা খারাপভাবে তুলনা করতে পারেন না। এতে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধাবোধ কমে যায়।
৭। তুমি সবসময় আমাকে কষ্ট দেয়ার চেষ্টা করো
পিতা-মাতার মতামতের বাইরে গিয়ে অনেক সময় সন্তান তাদের পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়। অধিকাংশ সময়েই তারা বুঝতে না পেরে এটি করে। অথবা আপনি যেভাবে ভাবছেন সে ভিন্নভাবে ভিন্ন বিষয়কে সঠিক মনে করছে। তাই বলে এ ধরণের কথা বলতে তাদের সিদ্ধান্তের জন্য তারা নিজেদেরকে অপরাধী মনে করে। সন্তানকে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে ও সেটার গুরুত্ব দিন। প্রয়োজনে তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপনি নমনীয়ভাবে মতামত দিতে পারেন।
৮। তোমার মতো সন্তান না থাকাই ভালো
উপরের কথাটি সন্তানের অনুভূতিতে সবচেয়ে খারাপ প্রভাব ফেলে। এটি সন্তানকে বলা সবচেয়ে হৃদয়বিদারক কথা। এতে তাদের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসে। ফলে ভালো চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে।
৯। খারাপ বন্ধুদের এড়িয়ে চলো
আমরা কখনই বন্ধু বানানোর আগে ভালোভাবে চিন্তা করি না, এমনকি শিশুরাও নয়। পার্থক্য হলো আমরা খারাপ সঙ্গ এড়িয়ে চলা বুঝতে পারি কিন্তু শিশুরা পারে না। শিশুদের বন্ধুরাই তাদের জগৎ। তাই ভালো বন্ধু তৈরি করার নির্দেশ না দিয়ে বরং ভালো-মন্দের খারাপটা বোঝাতে পারেন।