আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এতোই বিশাল যে এর গ্রহ-উপগ্রহ, তারা, নক্ষত্র বিজ্ঞানীদের প্রায়ই ধাঁধায় ফেলে দেয়। আর এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ‘ইউওয়াই স্কুটি’ (UY Scuti) নামের সবচাইতে বড় তারাটিই বিজ্ঞানীদের মাথা গুলিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
ইউওয়াই স্কুটিকে অতিকায় বিশাল তারাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে বিশাল এবং অতি বিশাল আরো দুটি ভাগ রয়েছে তারাদের। যদিও আয়তনের দিক থেকে এই তারা সবচেয়ে বড়, কিন্তু ভরের দিক থেকে কিন্তু সবচেয়ে বেশি নয়। তারাদের ক্ষেত্রে আয়তন এবং ভরের দিক থেকে আলাদাভাবে এদের বিশালত্ব নির্ণয় করা হয়।
যদিও ইউওয়াই স্কুটি ভরের দিক থেকে সূর্যের চেয়ে ৩০ গুন বড়, কিন্তু তারপরও সবচাইতে ভরবিশিষ্ট তারাদের শীর্ষতালিকার কোথাও এর নাম নেই। সবচেয়ে ভরবিশিষ্ট তারার স্থানটি দখল করে আছে R136a1 নামের একটি তারা। এই তারার ভর সূর্যের চেয়ে ২৬৫ গুন বেশি কিন্তু ব্যাসার্ধের দিক থেকে এটি সূর্যের মাত্র ৩০ গুন বড়।
সেক্ষেত্রে ইউওয়াই স্কুটির ভর সূর্যের ৩০ গুন বেশি হলেও, ব্যাসার্ধের দিক থেকে এই তারা সূর্যের চেয়ে ১হাজার ৭০০ গুন বড়। এটি এমন এক ধরণের তারা যেটির আকার পরিবর্তনের সাথে সাথে এর উজ্জ্বলতাও কমে-বাড়ে।
এই তারার আকার-আয়তনও পরিবর্তনশীল। আয়তনের এই কমবেশি ১৯২টা সূর্যের ব্যাসার্ধের সমান হতে পারে। এই কারণে ইউওয়াই স্কুটিকে অনেকে সবচাইতে বড় তারা না বলে, ‘সবচাইতে বড় তারাদের মধ্যে অন্যতম’ বলে উল্লেখ করেন।
ইউওয়াই স্কুটির আকার ৭৫০ মাইলের কাছাকাছি অথবা প্রায় ৮ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (১ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট= সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যবর্তী দূরত্ব= ১৪৯,৫০০,০০০ কিলোমিটার)। এটা এতোই বড় যে সূর্যের স্থানে এটিকে বসালে তা বৃহস্পতি গ্রহকেও ছাড়িয়ে যাবে।
ইউওয়াই স্কুটিকে সূর্যের স্থানে বসালে এর ফটোস্ফেয়ার বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথকেও ছাড়িয়ে যাবে। এর মানে হচ্ছে, এই তারার কেন্দ্র হতে উৎপন্ন কোন আলো বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথ পার না হওয়া পর্যন্ত মুক্তভাবে প্রবাহিত হতে পারবে না।
আর পার হওয়ার পরে এই আলোর একটা বিক্ষেপণ ঘটবে। এটা আমাদের সৌরজগত পর্যন্ত এসে পৌঁছাতে পারে। সেই সাথে এই তারা থেকে বহু বছর ধরে নিঃসৃত গ্যাস এবং ধূলাও এসে পড়বে।
এই তারা থেকে যেই পরিমাণ গ্যাসের নীহারিকা হারিয়ে গিয়েছে সেটা প্রায় ৪০০ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট। অর্থাৎ সূর্যের জায়গায় বসালে এটি প্লুটো গ্রহের ১০ গুন দূরত্ব পর্যন্ত যাবে।