আপনি যদি মধ্যযুগীয় ভারতীয় সংস্কৃতির ভক্ত হয়ে থাকেন তাহলে মিনা বাজার আপনার জন্য খুবই আকর্ষণীয় একটি জায়গা হবে নিঃসন্দেহে। সেই মুঘল আমল থেকে চলে আসছে এই বাজার যার প্রতিটি পরতে রয়েছে রাজকীয়তার ছোঁয়া। এখন পর্যন্ত টিকে থাকা পৃথিবীর সবচাইতে পুরনো বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মিনা বাজার।
মুঘল আমলে এই মিনা বাজার Kuhs Ruz (আনন্দের দিন) নামেও পরিচিত ছিল। এই বাজার প্রধানত ছিল নারীদের জন্য। পুরুষদের মধ্যে শুধুমাত্র রাজা এবং রাজপুত্ররা এই বাজারে আসতে পারতেন।
নববর্ষের উৎসবে ৫ থেকে ৮ দিনের জন্য বসতো মিনা বাজার। বাদশা হুমায়ূন প্রথম এই বাজার স্থাপন করেন। তবে সম্রাট আকবর এই বাজারের পরিচিতি ও সাফল্যের পিছনে মূল অবদান রেখেছেন। সাধারণ জনগনের জন্য এই বাজার উন্মুক্ত ছিল না। হারেমের মহিলারা, রাজপুত নারীরা এবং সম্মানী ব্যক্তিদের স্ত্রী ও কন্যাগণ এই বাজারে দোকান দিতে পারতেন। শুধুমাত্র রাজা, রাজপুত্র এবং সম্মানী ব্যক্তিরাই এই বাজার থেকে পণ্য কিনতে পারতেন। মূল্যবান কাপড়, অলংকার, তৈজসপত্র ইত্যাদি অত্যন্ত চড়া দামে বিক্রি হতো এই বাজারে।
বর্তমান সময়ে মিনা বাজারে প্রবেশ করলে চারপাশের সবকিছুতে একটা আভিজাত্য আর প্রাচীনত্বের স্বাদ পাওয়া যায় যা আপনার মন ভালো করে দেবে। নকশা করা কাপড়, কার্পেট, চিনামাটির বাসনপত্র এবং বিভিন্ন ইসলামিক তীর্থস্থানের পোস্টার চোখে পড়বে আপনার।
আগেকার মিনা বাজারে চড়া দামে জিনিস বিক্রি হলেও এখনকার মিনা বাজার বিখ্যাত ইসলামিক পণ্য ও কমদামে ভালো জিনিস পাওয়া যায় বলে। দিল্লী ও আশপাশের অঞ্চল থেকে এমনকি বিদেশী পর্যটকরাও এই বাজারে আসে অলংকার আর গৃহস্থালি জিনিসপত্র কেনার জন্য। পাশাপাশি নকশা করা শাল, কার্পেট, বিছানার চাদরও পাওয়া যায়, পাওয়া যায় হাতে তৈরি সুন্দর সব তৈজসপত্র। বেশ কয়েকটা নামকরা খাবার বিশেষ করে মিষ্টির দোকানও রয়েছে মিনা বাজারে।
দিল্লীর বিখ্যাত লালকেল্লার প্রবেশ মুখেই সেই মুঘল আমল থেকে চলে আসছে এই মিনা বাজার। এটাকে চক বাজারও বলা হয়ে থাকে বর্তমানে। পাকিস্তানে মিনা বাজারের আয়োজন করে থাকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বুর দুবাইয়ের একটি নামকরা শপিং কমপ্লেক্সের নাম মিনা বাজার।