আঙুল ফুটানো আমাদের জন্য খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। কিন্তু আঙুল ফুটালে মটমট শব্দও হয় কেন?
আমাদের শরীরে মোট ২০৬টি অস্থি বা হাড় রয়েছে। যে কোন দু'টি হাড়ের সংযোগস্থলকে ঘিরে থাকে যোজক কলা এবং লিগামেন্ট বা অস্থিসন্ধি। আর প্রত্যেকটি সংযোগস্থলের মাঝে থাকে এক প্রকার ঘন পিচ্ছিল তরল জাতীয় পদার্থ। যাকে বলা হয় সাইনোভিয়াল ফ্লুইড।
ফ্লুইডটির কাজ হল হাড়গুলির মাঝে যে কোন ধরণের সংঘর্ষ এড়াতে সহায়তা করা। এই তরলের মধ্যে বিভিন্ন গ্যাস সম্পৃক্ত হয়ে মিশে থাকে। যখন আমরা আঙুল ফোঁটাই তখন আসলে আমরা আঙ্গুলের দু'টি হাড়কে টেনে আলাদা করে ফেলার মত অবস্থার সৃষ্টি করি। এর ফলে অস্থি সংযোগস্থলকে ঘিরে থাকা যোজক কলার মাঝেও টানের সৃষ্টি হয় এবং তা আয়তনে বৃদ্ধি পায়।
এটা তো জানা কথা, আয়তন বৃদ্ধি পেলে চাপ হ্রাস পায়। আমরা যখন আঙুল ফুটানোর জন্য বাঁকাই তখন যোজককলার আয়তন বৃদ্ধির মাধ্যমে অস্থি সংযোগস্থলের মাঝের স্থানটি বেড়ে যায় যার ফলে অভ্যন্তরীণ চাপ কমে যায়। চাপ কমে যাবার ফলে সম্পৃক্ত গ্যাসগুলি তরলের সাথে মিশতে পারেনা এবং আয়তন বৃদ্ধির ফলে যে বাড়তি জায়গা তৈরি হয়েছিল তা পূরণ করার জন্য গ্যাসগুলি তখন বুদবুদের সৃষ্টি করে। বুদবুদ সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ক্যাভিটেশন পদ্ধতি।
সংযোগস্থানগুলিকে পুনরায় আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার সময় ফ্লুইডের মধ্যকার চাপ বেড়ে যায়। এই চাপের কারণে বুদবুদগুলি ফেটে যায় ও শব্দের সৃষ্টি হয়।
বুদবুদ ফেটে যাওয়ার পর গ্যাসের পুনরায় সাইনোভিয়াল ফ্লুইডে মিশতে ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মত সময় লাগে।আর এজন্যই একটি আঙুল ফুটানোর পর সাথে সাথে আবার একই আঙুলটি ফুটালে কোন শব্দ হয়না।
আগে ধারণা করা হত, আঙুল ফুটানোর ফলে অস্টিও আর্থ্রাইটিস নামক রোগ হতে পারে। তবে ১৯৯৮ সালে ডোনাল্ড উঙ্গারের প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যমে ধারণাটি ভুল প্রমাণিত হয়।
সেখানে তিনি প্রমাণ করেন, বিগত ৬০ বছর ধরে তিনি প্রতিদিন তার দেহের বামদিকের গাঁটগুলি টেনে টেনে ফুটাতেন। কিন্তু ডানদিকের গাঁটগুলিতে একবারের জন্যও হাত দেননি। এতে তার দুই হাতের মাঝামাঝি থাকা গাঁটগুলির কোনই ক্ষতি হয়নি। তিনি তার এই গবেষণার জন্য ২০০৯ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশেষ পুরস্কার পান।
তবে অতিরিক্ত আঙুল ফুটানো মোটেও উচিত না। কারণ এতে করে হাতের গ্রিপ করার ক্ষমতা অর্থাৎ কোন কিছু মুষ্ঠিবদ্ধ করে ধরার ক্ষমতা কমে যায়। তাছাড়া অতিরিক্ত ও জোরে জোরে ফুটানোর ফলে গাঁটগুলিতেও ব্যাথা হতে পারে।
তাই যদি কারো ঘন ঘন আঙুল ফোটানোর অভ্যাস থেকে থাকে তবে তা ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করাই ভালো।