যুদ্ধ চলাকালে সৈনিকদের কাছে গোপনে তথ্য আদান-প্রদান করা সহজ কাজ নয়। নেপোলিয়নের যুগে তো সেটা আরো কঠিন ছিল। তাই, নেপোলিয়ন তাঁর আর্মির ক্যাপ্টেন চার্লস বার্বিয়েরকে বলেন এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করতে যার মাধ্যমে সৈন্যরা রাতের বেলা নিঃশব্দে ও আলোর সাহায্য ছাড়াই যোগাযোগ করতে পারবে। বার্বিয়ের যে পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন তাতে ১২টি খোদাই করা বিন্দু (ডট) থাকে যা স্পর্শ করে সৈন্যরা মোট ৩৬ ধরনের শব্দ বুঝতে পারবে। এই পদ্ধতিটির নাম দেওয়া হয় নাইট রাইটিং। কিন্তু শুধুমাত্র হাতের স্পর্শ দ্বারা কোন শব্দ বোঝা ফ্রেঞ্চ সৈন্যদের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে ওঠে তাই শেষ পর্যন্ত এই পদ্ধতিটি বাতিল করা হয়।
সৈনিকদের তেমন কাজে না লাগলেও অন্ধদের জন্য এই পদ্ধতিটি আশীর্বাদ হয়ে আসে। ১৮২১ সালে বার্বিয়ের প্যারিসের রয়্যাল ইন্সটিটিউট অফ ব্লাইন্ডে গিয়ে পরিচিত হন লুইস ব্রেইল নামে এক প্রতিভাবান ব্যক্তির সাথে। শৈশবে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার জন্য ব্রেইল অন্ধ হয়ে গেলেও তার ইচ্ছাশক্তি দমে যায়নি। বার্বিয়েরের কাছ থেকে তার নাইট রাইটিং পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পর ব্রেইল এই পদ্ধতির বেশ কয়েকটি ভুল ও সীমাবদ্ধতা খুঁজে বের করেন এবং এটিকে আরো সরল রূপদান করার জন্য গবেষণা করেন। মাত্র ৬টি ডটের মাধ্যমেই ফ্রেঞ্চ বর্ণমালা ও সংখ্যা প্রকাশের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন লুইস ব্রেইল। যার ফলে উন্মোচিত হয় নতুন এক দুয়ার – দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি ও সীমিত দৃষ্টিক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের লেখাপড়া করার সুযোগ। আবিষ্কারকের নামানুসারে এই পদ্ধতির নাম দেওয়া ব্রেইল সিস্টেম। আজও বিশ্বজুড়ে দৃষ্টিহীন মানুষরা এই পদ্ধতিতে পড়তে পারছে।
সাধারন মানুষের মতো ছাপানো লেখা পড়তে পারে না দৃষ্টিহীন মানুষরা। তাই, ব্রেইল পদ্ধতিতে স্পর্শানুভুতির মাধ্যমে পড়া যায়। দৃষ্টিহীনদের জন্য মোট ৬টি ডটের বিভিন্ন কম্বিনেশনের সাহায্যে বিভিন্ন সংখ্যা ও অক্ষর প্রকাশিত হয়। হাতের আঙ্গুল দ্বারা দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা এই ডটগুলো অনুভব করে প্রতিটি অক্ষর বুঝতে পারেন।১৮২৯ সালে প্রকাশিত হয় অন্ধদের জন্য প্রথম ব্রেইল বই।
স্লেট ও স্টাইলাসের মাধ্যমে হাতের সাহায্যেই ব্রেইল লেখা যায়, তবে তা বেশ দুঃসাধ্য। বর্তমানে ব্রেইল টাইপরাইটার ও ই-ব্রেইলারের মাধ্যমে সহজে ব্রেইল লেখা যায়। বিভিন্ন স্ক্রিন রিডিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে অন্ধরা এখন কম্পিউটারও ব্যবহার করতে পারছে।
ব্রেইলেরও বিভিন্ন ভাষা আছে। একেক ভাষায় ব্রেইল একেক রকম। বাংলায় ব্রেইল সর্বপ্রথম শুরু হয় ভারতের কলকাতার একটি স্কুলে। ১৯৫৭ সালে ঢাকায় প্রথম দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্কুল খোলা হয়। ইউনেস্কোর সূত্রমতে বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলা ব্রেইল পদ্ধতির কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।