প্রকৃতির এক আশ্চর্য প্রাণী গিরগিটি। মুহূর্তের মধ্যে রং পাল্টে ধোঁকা দিয়ে দেয় শিকারী কিংবা শত্রুপক্ষকে। এই আজব ধরনের বৈশিষ্ট্য খুব কম সংখ্যক প্রাণীরই আছে।
পৃথিবীতে প্রায় একশ ষাট প্রজাতির বহুরূপী গিরগিটির দেখা মেলে। এদের বেশিরভাগ আফ্রিকা, মাদাগাসকার, স্পেন ও পর্তুগাল নিবাসী। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কাতেও বেশি দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে যেমন ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা ও হাওয়াইয়ের বনভূমিতেও এরা বসবাস করে।
গিরগিটি শরীরের রং পরিবর্তনের কৌশলের জন্যেই মোটামুটি অধিক পরিচিত। বহুরূপী গিরগিটি নিজেদের গায়ের রং পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু তারা তাদের শরীরের রং যে বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে বদলায়, তা নয়। এমনকি তারা ইচ্ছা মতো যেকোনো রংও ধারণ করতে পারে না। প্রত্যেকেই কিছু নির্দিষ্ট রং ধারণ করার সীমাবদ্ধতা আছে। প্রধানত গিরগিটির মনের অবস্থার ভিত্তিতে তাদের গায়ের রং বদলায়। যেমন ভয় অথবা রাগ। নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করতে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। গিরগিটির রং পরিবর্তনের এই রহস্য এখনো অধরা। তবুও যতটুকু জানা গেছে তা তুলে ধরা হচ্ছে।
প্রথমে আমরা জেনে নেই Ectotherm কি ?
যেসব প্রাণীর রক্ত খুব ঠান্ডা, দেহের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে বাইরে থেকে তাপ নেয় তাদেরকে Ectotherm প্রাণী বলে। গিরগিটিও ওই Ectotherm দলেই পড়ে। যখন খুব ঠান্ডা পড়ে, তখন দেহের মধ্যে তাপ বৃদ্ধি করার জন্যে এরা শরীরের রং একটু গাঢ় ধরণের করে ফেলে। আবার বাইরের তাপমাত্রা যদি বেশি হয়, তাহলে তারা শরীরের রং হালকা ধরণের করে দেয়, যেনো ভেতরের তাপ বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে। বেশিরভাগ সময়ে বাইরের তাপমাত্রা, আলো অনুভব করে এরা নিজদের রং বদলায়। এমনও হতে পারে, একটি গিরগিটি ঘুমুচ্ছে, বাইরের তাপমাত্রা ঠান্ডা হওয়ার কারণে এটি চামড়ার রং গাঢ় করে রেখেছে। ঐ সময়ে কেউ যদি এর উপর টর্চের আলো ফেলে, তাহলে যে অংশে আলো পড়ে সে অংশের রং আস্তে আস্তে হালকা ধরণের হয়ে যাবে।
গিরগিটির চামড়ার তিনটি স্তর রয়েছে।
- সবচেয়ে বাইরের স্তর Xanthophore যা লাল আর হলুদ রঙের জন্য দায়ী।
- মাঝেরটা Iridophore যেগুলো নীল রঙের জন্য দায়ী এই Iridophore কে আবার Guanophores ও বলে, কারণ ওই গ্রন্থিগুলোতে বর্ণহীন Guanine crystal থাকে আর এগুলোর মধ্যেই আলো প্রতিফলিত এবং বিচ্ছুরিত হয়ে নীল দেখায়।
- সবচেয়ে ভিতরের তিন নম্বর স্তরটায় থাকে কালো রঙের রঞ্জক পদার্থ নিঃসরণকারী গ্রন্থি Melanosome।
মূলত গিরগিটির চামড়ার তিনটি স্তর রং বদলানোর জন্য মূল ভূমিকা নেয়।
তাপমাত্রা বাড়ানো কমানো ছাড়াও আত্মরক্ষার জন্যেও গিরগিটি রং পাল্টে থাকে। আবার প্রজননের সময় স্ত্রী গিরগিটিকে আকর্ষণ করানোর জন্যেও পুরুষ গিরগিটি শরীরের রং পরিবর্তন করে থাকে।