আদিবাসী, গোত্র বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে এমন এক ধরণের জাতিকে বোঝায় যারা কোন রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, রীতি ইত্যাদি। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে-মহাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য গোত্র বা জনগোষ্ঠী। নিজেদের সংস্কৃতি আর রীতিনীতি দিয়ে এরা একটা দেশের সমাজব্যবস্থাকে করে তোলে আরও বৈচিত্রময়। এরকম কিছু জনগোষ্ঠী নিয়েই এই আয়োজন। আজ জানবো নেপালের গুর্খাদের সম্পর্কে।
নেপাল এবং উত্তর ভারতীয় অঞ্চলে বসবাসকারী এক প্রসিদ্ধ জাতিগোষ্ঠীর নাম গুর্খা। যদিও এটি একটি জাতিগোষ্ঠী কিন্তু বর্তমানে নেপালের সামরিক বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে গুর্খা বাহিনী।
ঐতিহাসিকভাবে ‘গুর্খা’ বা ‘গুর্খালি’ ছিল নেপালিদের পূর্বনাম। মূলত নেপালের বর্তমান গুর্খা অঞ্চল একসময় বিস্তৃত হয়ে বর্তমান নেপাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গুর্খা শব্দটি এসেছে ‘গো-রক্ষা’ থেকে যা বিবর্তিত হয়ে এই নাম এসেছে।
গুরু গোরক্ষনাথের নাম থেকে গোর্খা নামটির উৎপত্তি হয়েছে। অষ্টম শতাব্দীর দিককার একজন হিন্দু যোদ্ধা ও সন্ন্যাসী ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তাঁর শিষ্যবাপ্পা রাওয়াল রাজপুতানার (বর্তমান রাজস্থান) মেবার রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। বাপ্পা রাওয়ালের পরবর্তী উত্তরাধিকারগণ আরও পূর্বে চলে এসে গুর্খা বংশের পত্তন ঘটান। গুর্খা বংশ পরে নেপাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। গুর্খা জেলা আধুনিক নেপালের ৭৫টি জেলার মধ্যে অন্যতম।
গুর্খারা তাদের সাহসিকতা এবং সামরিক কৌশলের জন্য বিখ্যাত। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুর্খা রেজিমেন্ট ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেড অফ গুর্খায় নিজেদের সাহসিকতা ও শক্তিমত্তার ইতিহাসের জন্য সুপ্রসিদ্ধ এই গোষ্ঠী। ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশরা গুর্খাদের ‘মার্শাল রেস’ বা যোদ্ধা-জাতির মর্যাদা প্রদান করে। ব্রিটিশ ভারতে যুদ্ধপ্রিয়, আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন, সাহসী, অনুগত, সুশৃঙ্খল, শক্তিমান ও কর্মঠ জাতিগুলিকে “মার্শাল রেস”-এর মর্যাদা দেওয়া হত। ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে এই সকল মার্শাল রেস থেকে প্রচুর সংখ্যক সৈনিক নিয়োগ করা হত।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সেনাপ্রধান, ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ গোর্খাদের সম্পর্কে একটি বিখ্যাত উক্তি করেন। তিনি বলেন,
“If a man says he is not afraid of dying, he is either lying or is a Gurkha.”
অর্থাৎ, “যে ব্যক্তি বলে সে মৃত্যুভয়ে ভীত নয়, সে হয় মিথ্যাবাদী নয় একজন গুর্খা।”
গুর্খারা বাঁকানো এক বিশেষ ধরণের ছুরি ব্যবহার করে যা গুর্খা ছুরি নামে পরিচিত এবং খুবই নামকরা।