দরজায় কড়া নাড়ছে ক্রিসমাস।সারা বিশ্বের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা তোড়জোর শুরু করে দিয়েছেন তাদের বছরের সবচেয়ে বড় উৎসবটি পালনের প্রস্তুতিতে।
বড়দিন পালনের মূলভাব আর প্রথাগুলো ঠিক রেখে সময়ের সাথে দেশে দেশে বড়দিনের উদযাপনে যুক্ত হয়েছে তাদের নিজেদেরও বিভিন্ন আকর্ষণীয় আর মজার প্রথা।
নরওয়ে : ক্রিসমাস ইভে নরওয়েতে কোনো ঝাড়া-মোছা করা হয়না। সব ঝাড়ু নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে রাখা হয় যাতে কোনো ডাইনী বা দুষ্ট প্রেতাত্মা তা চুরি করে নিয়ে যেতে না পারে।
জাপান: ১৯৭৪ সালে করা এক ক্যাম্পেইনের পর থেকে ক্রিসমাস ইভেতে কেএফসিতে খাওয়া জাপানি পরিবারগুলোর মাঝে এক ধরণের প্রথাতেই পরিণত হয়েছে। তাছাড়া এদিন জাপানিরা তার প্রিয়জনদের গ্রিটিংস কার্ড পাঠিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করে।তবে কার্ডটির রঙ হতে হয় সাদা।
জার্মানি: জার্মানরা ক্রিসমাস ইভে ক্রিসমাসট্রিতে আচার লুকিয়ে রাখে। পরদিন সকালে যে বাচ্চা সবার আগে সেটা খুঁজে পায় তার জন্য থাকে বিশেষ উপহার।
নিউজিল্যান্ড: নিউজিল্যান্ডে ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে ঐতিহ্যবাহী কনিফার গাছের পরিবর্তে পহুটুকাওয়া গাছকে সাজানো হয়।
পর্তুগাল: প্রতি ক্রিসমাসের সকালে বিশেষ প্রাতঃভোজের আয়োজন করা পর্তুগালের অন্যতম ঐতিহ্য। বিশেষ এ ঐতিহ্যবাহী ভোজের নাম কনসোডা।নিজেদের সে সকল প্রিয়জন যারা আর তাদের মাঝে নেই তাদের এসময় স্মরণ করাই এ ভোজের রীতি।
ইউক্রেন: ইউক্রেনে ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর প্রথাগত সামগ্রী ও খেলনার পরিবর্তে কৃত্রিম মাকড়সা ও মাকড়সার জাল দিয়ে সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি।
সুইডেন: সুইডিশ ট্র্যাডিশন অনুযায়ী উৎসবের অন্যতম সংযোজন হল রাইস পুডিং। পুডিংয়ের মাঝে একটি খোসা ছাড়ানো almond রাখা হয়। ধরে নেয়া হয়, যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম বাদামটি খুঁজে পাবে তার আগামী এক বছরের মধ্যে বিয়ে হয়ে যাবে। তাছাড়া ক্রিসমাস ইভে খড় দিয়ে বানানো ছাগলের প্রতিকৃতি আগুনে পোড়ানোও সুইডেনে ক্রিসমাস উদযাপনের একটি বিশেষ ঐতিহ্য।
গ্রেট ব্রিটেন: ব্রিটেনে বহুবছরের পুরনো এক অদ্ভুত প্রথা আছে। এ প্রথা অনুযায়ী পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে ক্রিসমাসের বিশেষ ডেজার্ট- ক্রিসমাস পুডিংটি বেইক করার আগে তার মিশ্রণটি ক্লকওয়াইজ নাড়াতে হয় আর কোনো উইশ করতে হয়।
ভারত: পাইন গাছের অপ্রতুলতার কারণে ভারতীয়রা ক্রিসমাস ট্রি সাজায় আমগাছ বা কলাগাছ দিয়ে। আবার দক্ষিণ ভারতে, তামিলনাড়ু কেরালা- কর্ণাটক- অন্ধ্রপ্রদেশের মানুষেরা এই দিন ঘরের ছাদে ছোট ছোট মাটির প্রদীপ জ্বালায়।
ইতালি: ইতালিতে স্যান্টাক্লসের পরিবর্তে শিশুরা অপেক্ষা করে বিফানা নামের এক বন্ধুসুলভ ডাইনীর। যে কিনা ৫ জানুয়ারিতে শিশুদের খেলনা আর মিষ্টি উপহার দেয়।
ইথিওপিয়া: ইথিওপিয়ায় ক্রিসমাস পালিত হয় জানুয়ারির ৭ তারিখ।এ দিন সবাই সাদা কাপড় পরে আর ইথিওপিয়ান পুরুষরা ganna নামের একটি খেলা খেলে থাকে।এটি একটি দ্রুত গতির খেলা যা লাঠি আর কাঠের বল দিয়ে খেলা হয়।
কিউবা: কিউবাতে ক্রিসমাস উপলক্ষে আয়োজন করা হয় parrandas festival এর। এর আয়োজক শহর থাকে রেমেডিওস।ক্রিসমাস ইভ উপলক্ষে এশহরকে দু’ভাগে ভাগ করে প্রত্যেকটা বিল্ডিংকে বিভিন্ন থিম অনুযায়ী আলো দিয়ে সাজানো হয় স্কাল্পচারের মত করে।
বাভেরিয়া: উৎসব উপলক্ষে আতশবাজি বা পটকা ফোটানোর চল রয়েছে বহুদেশেই । তবে বাভেরিয়ার উদযাপনটি একেবারে অন্যরকম। এখানে পালন করা হয় অনেক হৈচৈ পূর্ণ ক্রিসমাস। বাভেরিয়ার পার্বত্যাঞ্চলবাসীরা এদিন জাতীয় পোষাক পরে আকাশে কামান দাগে।
স্লোভাকিয়া : স্লোভাকিয়াতে রয়েছে ক্রিসমাসের আজব ঐতিহ্য। বাড়ির সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিটি এদিন চামচ ভর্তি loksa পুডিং নিয়ে সিলিং এ ছুঁড়ে মারেন। আর পুডিং যত বেশি আটকে থাকবে ব্যাপারটা হবে ততই ভাল।