নিউমোনিয়া থেকে সাবধান

আজ ১২ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস’। সারা বিশ্বে সপ্তমবারের মত পালিত হচ্ছে দিবসটি।

প্রথমবারের মত নিউমোনিয়া দিবস পালিত হয়েছিল ২০০৯ সালে শিশু উন্নয়নে কাজ করা ১০০ সংগঠনের পক্ষ থেকে। অবশ্য প্রথমবার সেটা ছিল নভেম্বরের ২ তারিখ। পরবর্তীতে ২০১০ সাল থেকে তা প্রতিবছর পালিত হচ্ছে ১২ তারিখে।

নিউমোনিয়া হল ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগ। সাধারণত ভাইরাস,ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণে ফুসফুসের প্যারেনকাইমায় প্রদাহের ফলই নিউমোনিয়া।

বর্তমান সময়ে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুদের মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এই নিউমোনিয়া। বিশ্বজুড়ে প্রতি ২০ সেকেন্ডে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে একজন করে নিউমোনিয়ায় প্রাণ হারায়।

আর প্রতিবছর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় এ বয়সী ১৫৫ মিলিয়ন শিশু এবং এর মধ্যে ১.৬ মিলিয়নই প্রাণ হারায়। ইউনিসেফের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ রোগে আক্রান্ত হয়ে শুধু ২০১৩ সালেই মারা গিয়েছে ৯ লাখেরও বেশি শিশু। যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে। শিশু মৃত্যুর এই হার এইডস ও ম্যালেরিয়ায় সম্মিলিত প্রাণহানির চেয়েও বেশি।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নিউমোনিয়ার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। অবস্থান বর্তমানে পঞ্চম। সেভ দ্যা চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৪০টি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে সারা বছরে দেশে এই রোগে প্রাণ হারাচ্ছে ২০ হাজারেরও বেশি শিশু।

হতাশার বিষয় হল, নিউমোনিয়ার প্রতিষেধক থাকা সত্ত্বেও এবং তা নিরাময়যোগ্য হওয়ার পরেও প্রতিবছর বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে বিপুল সংখ্যক শিশুর মৃত্যু ঘটছে। আর তাই নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে সাধারণের মাঝে সচেতনতা গড়তেই সাত বছর আগে ঘোষণা দেয়া হয় বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস পালনের।

প্রতিবছরই নিউমোনিয়া দিবসের কোন না কোন প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে। এবারের বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবসের প্রতিপাদ্য হল- ‘ফাইট নিউমোনিয়া, সেইভ এ চাইল্ড’ ।

নিউমোনিয়ার ভয়াল কবল থেকে সারা বিশ্বের শিশুদের রক্ষার জন্য ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশনসহ শিশুদের পক্ষে কাজ করা দেশ-বিদেশের বহু সংগঠন নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সেই কার্যক্রমেরই অংশ হিসেবে চলতি বছর থেকে আমাদের দেশে নিউমোনিয়া প্রতিরোধে অতি কার্যকর প্রতিষেধক নিউমোকক্কাস কনজুগেট ভ্যাকসিন (পিসিভি) প্রদান করা হচ্ছে।

যদিও গত ৩০ বছর ধরে পিপিএসভি (নিউমোকক্কাল পলিস্যাকারাইড) নামে একটি ভ্যাক্সিন সাফল্যের সাথেই নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে সক্ষম হচ্ছিল, তবে এই টিকাটি ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য নিরাপদ নয় বলেই পিসিভি-এর আগমন। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম ছয় মাসের নিচে বয়সী সব শিশুদের এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিককালে, পিসিভি-১৩ নামে পিসিভি এর চেয়ে আরো একটি উন্নত ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রত্যেক চব্বিশ মাসের কম বয়সী শিশুকে টিকাটির চারটি ডোজ দিতে হবে। প্রথমটি জন্মের দুই মাস পর, পরের দু’টি চতুর্থ ও ষষ্ঠ মাসে, আর সর্বশেষ ডোজটি ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে। আর জন্মের দুই বছরের মধ্যে যদি টিকাটি না প্রদান করা থাকে তবে তা নিয়ম অনুযায়ী নিতে হবে ২ থেকে ৪ বছরের মধ্যে।

তাছাড়া ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিরাও নিরাপদ নয় এই নিউমোনিয়ার হাত থেকে।তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাদেরও আনতে হবে ভ্যাক্সিনেশনের আওতায়। আসলে ব্যক্তিপর্যায় থেকে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ শুরু করা গেলেই বৃহৎ পরিসরে নির্মূল করা সম্ভব নিউমোনিয়া। তাই আপনিও এগিয়ে আসুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার ছোট্ট শিশুসহ বাড়ির প্রবীণ ব্যক্তিটিকেও নিয়ে আসুন এই কার্যক্রমের আওতায়। গড়ে তুলুন সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান পরিবার।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন