পানির প্লবতা

সে বহুকাল আগের কথা, রাজা মশাইয়ের রাজসভায় বিরাট পণ্ডিত আর্কিমিডিস, তবে রাজাও কম পণ্ডিত নয় তাই নিজের পণ্ডিত্ব জাহির করার জন্য সে প্রতিদিন নতুন নতুন প্রশ্ন বের করতো আর্কিমিডিসকে জব্দ করার জন্য। তাই প্রতিদিনের মতো একদিন রাজা আর্কিমিডিস কে রাজসভায় ডাকলেন।

হুজুরের জরুরী তলব হটাৎ ?

হ্যাঁ আর্কিমিডিস।

তা কি ব্যাপার হুজুর ?

এই নাও দুইটা স্বর্ণের বার। আমাকে বল তো কোন স্বর্ণের বারে ভেজাল আছে?

আর্কিমিডিসের তো মাথায় হাত। রাত নেই দিন নেই সারা দিন শুধু বসে বসে ভাবছে আর্কিমিডিস যে কোন উপায়ে ভেজাল স্বর্ণের রহস্য খুলবে। স্বর্ণের রহস্য ভাবনা নিয়ে বাথরুমের বাথটাবে বসে ভাবছেন আর্কিমিডিস সাহেব হটাৎ করে স্বর্ণের বারটা পানিতে পড়ে গেল।

আর্কিমিডিস রাগান্বিত হয়ে বলল, ‘ হায় বাপু পড়ে যাওয়ার বুঝি আর সময় পেল না ’ ।

এই বলে যখনি স্বর্ণের বারটা পানি থেকে উঠাতে গেলেন দেখলেন যে বারটার ওজন যতটুকু সে ঠিক ততোটুকু পানি অপসারণ করেছে।

ব্যাপারটা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো আর্কিমিডিস, আরে হয়ে গেলো তো সমস্যার সমাধান।

দৌড় দিয়ে আর্কিমিডিস গেলো রাজসভায়, রাজাকে ধাঁধার উত্তরটা যে জানাতে হবে কিন্তু তার এই উত্তর না শুনে সবাই যে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কি হল সবার ! তা জানার জন্য আর্কিমিডিস নিজের দিকে তাকালো। হায় কপাল সে যে বস্ত্র পরিধান না করে রাজসভায় হাজির ! 

আর্কিমিডিসের এই সুত্র দুইটির সূচনা এমন হাস্যকর ভাবে শুরু হলেও এর ফলাফল কিন্তু সুদূর প্রসারী। আর সেই সুত্র দুইটি হল

১। ভাসমান বস্তুর সূত্র

২। ডুবন্ত বস্তুর সূত্র

ভাসমান বস্তুর সূত্রের ক্ষেত্রে যদি বস্তু কোন তরলে ভেসে থাকে তাহলে " বস্তুর মোট ভর তার ডুবন্ত অংশের বাহিরের আয়তনের সমআয়তনের পানি অথবা তরলের ভরের সমান"

এক্ষেত্রে যদি বস্তুটি ভাসে তাহলে অবশ্যই অপসারিত তরলের ভর বস্তুর মোট ভরের চেয়ে বেশী বা সমান হতে হবে।  বস্তুর ভরের নিরেট আয়তন অংশটুকু বস্তুর ঘনত্বের গুনফলকে বোঝায়, কিন্তু তরলের আয়তন হচ্ছে বস্তুর বাহিরের আবরণের আয়তনের তরলের ঘনত্বের গুনফল। কি খুবই জটিল মনে হচ্ছে তাই না ? তাহলে এখন একটু সহজভাবে আবার বলি , যখন বস্তুর ওজন বের করবো তখন বস্তুর মধ্য যদি কোন ফাঁকা অংশ থাকে সে অংশ বাদ দিয়ে হিসাব করবো। আবার তরলের ওজন হিসাব করার জন্য বস্তুর যে অংশ পানির মধ্যে থাকবে তার আয়তনের বাহিরের অংশটুকু  হিসেব করবো।

আচ্ছা এইটা তো শুধু ভাসমান বস্তুর জন্য তাহলে ডুবন্ত বস্তুর জন্য ?

ডুবন্ত বস্তুর জন্য রয়েছে আলাদা সূত্র। ডুবন্ত বস্তুর ক্ষেত্রে যদি বস্তু কোন তরলে ডুবে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে  তরলে ডোবানোর ফলে বস্তুর হারানো ওজন বাপ্লবতা হবে বস্তুর মোট আয়তনের সমান আয়তনের তরলের ভরের সমান। 

সাধারণত আমরা দেখি যে কোন বস্তুকে পানিতে ডোবালে সেই বস্তুর ওজন কম লাগে অর্থাৎ আগের ওজনের চেয়ে হালকা লাগে। যেমন একটি বলকে পানিতে ফেলা হলে দেখবো যে বলটি ওজনে হালকা লাগছে। আচ্ছা কখনো কি মনে প্রশ্ন আসে যে কেন হঠাৎ করে বস্তুর ওজনটা কমে যায় ? আসলেই এটা কি বলের জাদু নাকি পানির প্লবতার জাদু ?

জড় পদার্থ বলের এইখানে কোন হাত নেই যে সে জাদু করে ওজন কমাবে তাই এই জাদুর আসল কারণ হচ্ছে – যখন কোন তরলে বস্তু ফেলা হয় তখন পানি বস্তুটাকে ভাসিয়ে রাখতে চায় অর্থাৎ তরল বস্তুর উপর ঊর্ধ্বমুখী বল প্রয়োগ করে। এই বলটি হলো তরলের প্লবতা।

কোন বস্তুর উপর পানি দ্বারা প্রযুক্ত প্লবতা আর বস্তুর হারিয়ে যাওয়া ওজন সমান, কারণ প্লবতার কারণে বস্তু ওজন হারায়। এই প্লবতার মানটা হলো বস্তুর মোট আয়তনের সমআয়তনের তরলের সাথে তরলের ঘনত্বের গুনফল। অর্থাৎ বস্তু যখন পানিতে ডুবে যায় তখন সে কিছুটা জায়গা  দখল করে । এই দখলকৃত জায়গাতে যে পরিমান তরল ছিল অবশ্যই তার একটি ভর আছে এবং সেই ভরটাই হলো বস্তুর উপর প্রয়োগকৃত প্লবতার মান অর্থাৎ বস্তুর হারানো ওজন।

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন