পৃথিবীতে ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী রয়েছে। আমাজন, মিসিসিপি, ইউফ্রেটিস আর নীলনদের মত নদীগুলো মানবসভ্যতার ইতিহাসে অসামান্য অবদান রেখেছে। দানিয়ূব, সেইন, ভলগা আর থেমসের মত নদীগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বড় বড় শহর।
কিন্তু যখনই পৃথিবীর দীর্ঘতম নদীর কথা আসে তখন উঠে আসে নীলনদের নাম। ৬ হাজার ৫৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদ আফ্রিকার ১১টি দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এবং সমৃদ্ধ মানব সভ্যতা ‘মিশরীয় সভ্যতা’ গড়ে উঠেছিল এই নীলনদকে কেন্দ্র করেই।
নীলনদের উৎপত্তি হয়েছে আফ্রিকার বৃহত্তম হ্রদ ভিক্টোরিয়া হ্রদ থেকে। বিশাল পথ পাড়ি দিয়ে ভূমধ্যসাগরে এসে পতিত হয়েছে এ নদ। যদিও নীল নদের অনেকগুলো উপনদী ও শাখানদী রয়েছে তবে ব্লু নাইল এবং হোয়াইট নাইল এদের মধ্যে সর্ববৃহৎ।
হোয়াইট নাইল নীলনদের বেশিরভাগ পানি এবং পলি বহন করে যার উৎপত্তি হয়েছে মধ্য আফ্রিকার হ্রদবেষ্টিত অঞ্চল থেকে। অন্যদিকে ব্লু নাইলের উৎপত্তি হয়েছে ইথিওপিয়ার তানা হ্রদ থেকে। উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে এটি সুদানের খার্তুমে মিলিত হয়ে হোয়াইট নাইলের সঙ্গে।
কারো কারো মতে নীলনদের বয়স ২৫ মিলিয়ন বছরেরও বেশি। প্রাচীনকালে নীল নদ আরও বৃহৎ ছিল বলে জানা যায়। কালের বিবর্তনে এর অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। নীলনদের একটা অংশ ভিরুঙ্গা পর্বতের অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ থেকে ১০০০ অব্দে ইয়েলো নাইল নামে নীলনদের আরো একটি শাখানদী ছিল।
সুদানের দক্ষিণে বিশাল জলাভূমি থাকার কারণে বহুকাল পর্যন্ত গ্রীক এবং রোমানদের কাছে নীলনদের উৎস অনাবিষ্কৃত থাকে। নীলনদের উৎস সর্বপ্রথম ইউরোপীয়দের নজরে আসে ১৮৫৮ সালে।
ব্রিটেনের জন হানিং স্পিক আবিষ্কার করেন, একটি বৃহৎ হ্রদ থেকে নীলনদ প্রবাহিত হচ্ছে এবং ব্রিটেনের রানীর নামের সাথে নাম মিলিয়ে তিনি এ হ্রদের নাম রাখেন ভিক্টোরিয়া হ্রদ।
ইউরোপীয় উপনিবেশিক আমলে পণ্য পরিবহনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় নীলনদ। ১৯শ শতকে মিশর এবং সুদানে যাওয়ার জন্য এই জলপথ ব্যবহার করা হতো। ১৮৬৯ সালে সুয়েজ খাল খনন সম্পন্ন হওয়ার পর এবং ১৮৭০ সালে মিশরে ব্রিটিশ শাসন শুরু হলে এই পথে নৌযান চলাচল আরো বৃদ্ধি পায়।
বর্তমানে নীলনদ মিশর এবং সুদানের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যে দেশগুলোর উপর দিয়ে এ নদ বয়ে গেছে তাদের সেচ এবং চাষাবাদের কাজে এর পানি ব্যবহার করা হয়। একই সাথে এই অঞ্চলে মানব সভ্যতার বিকাশে নীলনদের অবদান অনস্বীকার্য।