তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে আমরা এমন এক পৃথিবীর দিকে এগিয়ে চলেছি যেখানে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। একটা সময়ে মোবাইল ফোন ছিল সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিস্কারের মধ্যে একটি। একটি যন্ত্র, যা দিয়ে কিনা কথা বলা যায়, কিন্তু কোন তার যুক্ত নেই! তারপর যখন মোবাইলে প্রথম ক্যামেরা যুক্ত হল, মানুষ আরও অভিভূত হয়ে পড়লো। এই ছোট্ট যন্ত্রটি দিয়ে কিনা ছবিও তোলা যাবে! কিন্তু এখন দিন দিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এতই এগিয়ে চলেছে যে এখন প্রায় অসম্ভব কোন আবিষ্কারেও মানুষ তেমন অভিভূত হয় না। তাই বলে আবিষ্কার থেমে নেই, দিন দিন আরও উন্নত যন্ত্রপাতি বেরিয়েই চলেছে এবং কবে এর শেষ কেউ জানে না।
মোবাইল ফোন আজকাল মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তুগুলোর মধ্যে একটি। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত এ যন্ত্রটি ছাড়া যেন চলেই না। তো এই মোবাইল ফোন নিয়ে মানুষের গবেষণার আজও কোন শেষ নেই। দিন দিন নতুন নতুন মডেলের মোবাইল ফোন বের হচ্ছে, আর সেই সাথে যুক্ত হচ্ছে অভাবনীয় সব প্রযুক্তি। আজকাল স্মার্টফোনে GPS ট্র্যাকার পর্যন্ত যুক্ত থাকে, যার সাহায্যে নিজের অবস্থান জেনে নেয়া যায়।
স্মার্টফোনের এসব সুবিধার জন্য এর ভেতরে কত ধরণের ছোট ছোট সেন্সর বসানো থাকে তার সম্বন্ধে এর ব্যবহারকারীদের কোন ধারণাই নেই। আবার কিছু স্মার্টফোনে ইদানিং এমন ফিচার থাকে যে এর থেকে চোখ সরালে স্ক্রিন অফ হয়ে যায়, বা ক্যামেরার ওপর হাত নাড়িয়েই একের পর এক পৃষ্ঠা ওল্টানো যায়। আবার গেম খেলার সময়ে গাড়ি চালানোর জন্য ফোনটিকে কাত করে গাড়িটিকে চালানো যায়। এই জাতীয় ফিচার সর্বপ্রথম বাজারে আনে অ্যাপল কোম্পানি তাদের আইফোন ৪ দিয়ে। মোবাইল ফোনে Gyroscope Sensor ( জাইরোস্কোপ সেন্সর ) নামে একটি বিশেষ প্রযুক্তির সেন্সর যুক্ত করে এটি সম্ভব করা হয়েছে।
জাইরোস্কোপ (Gyroscope) শব্দটি এসেছে গ্রীক ' গুরোস ' (guros) ও ' স্কোপিও ' (scopio) থেকে যার অর্থ ' বৃত্ত ' এবং ' দেখা '। জাইরোস্কোপ বলতে তখন এক ধরণের ঘূর্ণায়মান চাকতিকে বোঝানো হত যা দিয়ে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যেকোনো জায়গার কোণ ও দিক নির্ণয় করা হত। পরবর্তীতে এই ধারণা কাজে লাগিয়ে জাইরোস্কোপ কম্পাস আবিষ্কার হয় যা প্রথমে বিভিন্ন জাহাজে, হেলিকপ্টারে ও উড়োজাহাজে চুম্বকীয় কম্পাসের পরিবর্তে ব্যবহার করা হত।
এরপর তৈরি হয় জাইরোস্কোপ সেন্সর, যা আধুনিক প্রযুক্তিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। জাইরোস্কোপ সেন্সরের কাজ হল কৌণিক ত্বরণের ওপর ভিত্তি করে ঘূর্ণন বা নড়াচড়া নির্ণয় করা। মোবাইল ফোনটি যখন স্থির থাকে, তখন এতে কোন কম্পন সৃষ্টি হয় না। কিন্তু যখন আমরা এটাকে হাতে নেই, তখন না নাড়ালেও আমাদের শরীরের স্বাভাবিক নড়াচড়ার কারণে সামান্য হলেও নড়ে ওঠে, আর নড়াচড়ার ফলে সৃষ্টি হয় কম্পন। জাইরোস্কোপ সেন্সর এই সামান্য কম্পনও ধরতে পারে।
আবার ফোনটিকে আমরা যখন কোনদিকে কাত করি, তখন এর ত্বরণের পরিবর্তন হয়, এই কোণ ও ত্বরণের পরিবর্তন হিসাব করেই জাইরোস্কোপ সেন্সর বের করে যে ফোনটিকে কোনদিকে কত ডিগ্রি কোণে ঘুরানো হয়েছে এবং সেই অনুসারে ফোনের স্ক্রিনটাকে ঘুরিয়ে দেয়। এর ফলেই গেম খেলার সময় ফোন ডানদিকে কাত করলে গাড়ি বা মোটরসাইকেল ডানদিকে যায়, আবার বামদিকে কাত করলে বামদিকে যায়।
এমনকি ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার সময়ে ছবিকে আরও সুন্দর করতে সঠিক ফোকাসিং ও মুখের অবস্থান সঠিকভাবে নির্ণয় করতেও জাইরোস্কোপ সেন্সর সাহায্য করে। জাইরোস্কোপ সেন্সর এভাবে নড়াচড়া বের করে আমাদের জন্য মোবাইল ফোনের ব্যবহার আরও সহজ করে দেয়।