অতিরিক্ত ঘুম ডেকে আনে মৃত্যু!

আমাদের দেহকে কর্মক্ষম রাখতে ঘুম অত্যাবশ্যক। সুস্থ থাকার জন্য এবং শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালানোর জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। কিন্তু কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। তেমনি অতিরিক্ত ঘুমের কারণে মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

বিষণ্ণতা বেড়ে যাওয়া
২০১৪ সালের দুইটি গবেষণা থেকে জানা যায়, মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণ প্রকাশ পায়। দেখা গেছে, যারা দৈনিক ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমায় তাদের ২৭ শতাংশ মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা থাকে। কিন্তু যারা ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমায় তাদের ৪৯ শতাংশ মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণ দেখা যায়।

মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন
২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্ক নারীরা যারা বেশি ঘুমায় তাদের ৬ বছরের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়ে। যেসব নারীরা ৯ ঘণ্টার বেশি বা ৫ ঘণ্টার কম ঘুমায় তাদের মস্তিষ্কে ২ বছরের মধ্যেই এসব দুর্বলতা প্রকাশ পায়।

গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করে
২০১৩ সালে কোরিয়ার একটি গবেষক দল ৬৫০ জন নারীর উপর পরীক্ষা করে জানান যে অতিরিক্ত ঘুম নারীদের গর্ভধারণে সমস্যার সৃষ্টি করে। তারা জানান যেসব নারীরা ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমান তাদের মাঝে গর্ভধারণের হার বেশি। আর যারা ৯-১১ ঘণ্টা ঘুমান তাদের মাঝে এই হার সবচাইতে কম। অতিরিক্ত ঘুমের কারণে নারীদের দেহে হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়াসহ নানা জটিলতার সৃষ্টি হয় যেগুলো গর্ভধারণের ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা তৈরি করে।

ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
কিউবেকের একটি গবেষণা দলের গবেষণা থেকে জানা যায়, যেসব ব্যক্তিরা দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুমায়, ৬ বছর সময়ের মধ্যে তাদের মাঝে টাইপ-টু ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। কিন্তু যারা ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমায় তাদের মাঝে এই হার অনেক কম।

ওজন বেড়ে যাওয়া
কিউবেকের একই গবেষণা দল অতিরিক্ত ঘুমের কারণে মানুষের ওজন বেড়ে যাওয়া এবং মেদ জমা নিয়ে গবেষণা করেছেন। দেখা যায়, যারা বেশি ঘুমায় বা অনেক কম ঘুমায় তাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। যারা ৯-১০ ঘণ্টা ঘুমায় তাদের ২৫ শতাংশ মানুষের ওজন ৫ কিলোগ্রাম বেড়ে যায়। এমনকি তারা পরিমিত খাবার এবং ব্যায়াম করলেও এমনটি ঘটতে থাকে।

হৃৎপিণ্ডে জটিলতা
আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজি ২০১২ সালে তাদের একটি গবেষণা পেশ করেন। এতে দেখা যায়, ৮ ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুমালে মানুষের মাঝে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষকেরা ৩ হাজার মানুষের উপর গবেষণা করে দেখেন যে যারা ৮ ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুমায় এঞ্জিনা নামক হৃদরোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়ে যায় এবং করোনারি হার্ট ডিজিজের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি ১.১ গুন বেড়ে যায়।

কম বয়সে মৃত্যুবরণ
২০১০ সালে ১৬টি ভিন্ন ভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা যায়, যারা অতিরিক্ত বেশি বা কম ঘুমায় তাদের মৃত্যু দ্রুত ঘটে। ৮ ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুমালে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি ১.৩ গুন বেড়ে যায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন