প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা বাদ দিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পর্যায়ক্রমে চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্তও সব বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় নেওয়া হবে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে এই পাঠদানের অন্যতম উদ্দেশ্য পাবলিক পরীক্ষার সংখ্যা ও চাপ কমানো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ধারাবাহিক মূল্যায়নের প্রস্তুতি হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে ‘মাস্টার ট্রেইনার’। এসব মাস্টার ট্রেইনার সারাদেশের শিক্ষকদের সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান ও ধারাবাহিক মূল্যায়নে যোগ্য করে গড়ে তুলবেন।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিটি বিষয়ের জন্য ৪০ জন হিসাবে ৬০০ জন শিক্ষককে মাস্টার ট্রেইনার করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা আরও বাড়ানো হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের জন্য প্রথমে দুটি গ্রুপে ৬০০ জন মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা হচ্ছে। প্রতি বিষয়েরে জন্য ৫০ জন করে মাস্টার ট্রেইনার প্রস্তুত করা হবে। এসব মাস্টর ট্রেইনার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের জন্য শিক্ষকদের প্রস্তুত করবেন।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, আগামী ৩০ মার্চ থেকে প্রথম ব্যাচের ছয় দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব বিষয় ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শেষ হলে পঞ্চম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা বাদ দেওয়া হবে। অষ্টম শ্রেণি শেষে অনুষ্ঠিত হবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সৃজনশীল পদ্ধতির আওতায় আনতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত থাকবে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায়। বর্তমানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় রয়েছে। আর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে মাধ্যমিক পর্যায়ে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিকের আওতায় আনা হলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষার্থী মূল্যায়নের ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে— প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং তৃতীয় থেকে সব শ্রেণিতে ত্রৈমাসিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা চালু থাকবে। পঞ্চম শ্রেণি শেষে উপজেলা/পৌরসভা/থানা (বড় বড় শহর পর্যায়ে) সবার জন্য অভিন্ন প্রশ্নপত্রে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অষ্টম শ্রেণি শেষে আপাতত ‘জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা’ নামে একটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং এই পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হবে। প্রাথমিকের সব শ্রেণিতে কার্যকরভাবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হবে। আর খেলাধুলা ও শরীরচর্চার দক্ষতা ধারাবাহিক মূল্যায়নে স্থান পাবে।
অন্যদিকে, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী মূল্যায়নের বিষয়ে বলা হয়েছে— দশম শ্রেণি শেষে জাতীয় ভিত্তিতে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই পরীক্ষার নাম হবে ‘মাধ্যমিক পরীক্ষা’। দ্বাদশ শ্রেণি শেষে আরও একটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই পরীক্ষা নাম হবে ‘উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা’। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে সৃজনশীল পদ্ধতিতে এবং পরীক্ষার মূল্যায়ন হবে গ্রেডিং পদ্ধতিতে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষাব্যবস্থা তুলে দিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় নেওয়ার ঘোষণা দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২০১৭ সালের জেএসসিতে পরীক্ষায় বাদ দেওয়া হয় চারু ও কারুকলা, শারীরিক শিক্ষা এবং কর্মমুখী শিক্ষা। ২০১৭ সালের অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে কৃষি ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান। এসব বিষয়ের ধারাবাহিক মূল্যায়ন করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একপর্যায়ে সব বিষয় নেওয়া হবে ধারাবাহিক মূল্যায়নে।