আকাশপথে জিপ-রাইডিং

আকাশে উড়ার ইচ্ছে মানুষের সেই আদিকাল থেকে। আর রাইট ব্রাদার্স মানুষের এই ইচ্ছের বাস্তবায়ন ঘটিয়েছিল উড়োজাহাজ আবিষ্কারের মাধ্যমে। তার পর থেকেই মানুষের আকাশ পথে বিচরণ শুরু হয়। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় মানুষের আকাশ পথে ভ্রমণ পেয়েছে নতুন নতুন রূপ। তারই ধারাবাহিকতায় এতে যুক্ত হয়েছে জিপ রাইডিং বা ক্যবল রাইডিং। এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে যেমন Sypline, zip wire, aerial runway, aerial ropeslide, death slide, flying fox কিংবা foefie slide ইত্যাদি নামেও পরিচিত।

অনেক অনেক আগে পাহাড়ি দেশে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে জিপ রাইডার ব্যবহৃত হতো। চীনের কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে নদীর উপরে ব্রিজের পরিবর্তে জিপ লাইন ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ২০১৫ সালে নিরাপত্তা জনিত কারনে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

শুরুর দিকে জিপ রাইডিং করতে গিয়ে অনেকে মৃত্যুবরণও করেছে। ১৭৩৯ সালে রবার্ট ক্যাডম্যান নামের এক ব্যক্তি সেন্ট মেরির উঁচু চার্চ থেকে নামার সময় দড়ি ছিঁড়ে মারা যান। অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুড়ঙ্গ বা নদীর ওপারে শ্রমজীবী ​​মানুষের জন্য খাবার বা অন্যান্য সরঞ্জাম পাঠাতে ব্যবহার করা হতো এই লাইন। অস্ট্রেলিয়ান সৈন্যরা বিভিন্ন স্থানে খাদ্য, খবর ​​এবং এমনকি গোলাবারুদ পাঠানোর কাজেও এটি ব্যবহার করেছিল।

বর্তমানে রোমাঞ্চকর ভ্রমন প্রেমীদের জন্য জিপ রাইডিং একটি অন্যতম আকর্ষণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দূর্গম এলাকা যেখানে পায়ে হেঁটে যাওয়া প্রায় অসম্ভব সে এলাকাগুলো চাইলেই দেখে আসা যায় এর মাধ্যমে। কোস্টারিকা, ফ্লোরিডা কিংবা নিকারাগুয়ার গভীর অরণ্যগুলো জিপ লাইন ভ্রমণকারীদের জন্য আদর্শ গন্তব্যস্থল।

মজার ব্যাপার হল উড়োজাহাজের মতো এতে জ্বালানির প্রয়োজন পড়ে না। অভিকর্ষজ ত্বরণ জিপ লাইনারের মূল চালিকা শক্তি। আর তাই লাইনের শুরুটা হবে উঁচু কোন স্থানে আর ক্রমান্বয়ে তা নিচে নেমে আসবে। লাইনের সাথে থাকে একটি পুলি যা অনায়াসে লাইনের উপর দিয়ে চলাচল করতে পারে। পুলির সাথে যুক্ত থাকে কিছু সরঞ্জাম যা রাইডটাকে মসৃণ রাখে। ভ্রমণকারী পুলির সাথে যুক্ত থাকে সেইফটি হারনেস(harness) এর মাধ্যমে। আর হাতে থাকতে হয় সেইফটি গ্লাভস ও মাথায় হেলমেট। ভ্রমণকারী যত নিচে নামতে থাকে অভিকর্ষজ ত্বরণ তত কমতে থাকে, ফলে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছানোর পর তা আপনা থেকেই থেমে যায়। এছাড়াও হাতে থামানোর মতো হ্যান্ডব্রেকও থাকে।

উপযুক্ত প্রশিক্ষণ থাকলে জিপ লাইনার দিয়ে অরণ্যে ভ্রমণ একটি সহজ ও নিরাপদ মাধ্যম। আর তাই ২০১২ সালে অ্যামেরিকায় প্রায় ২০০ লাইনার স্থাপন করা হয় এবং পরবর্তীতে তা ১৩০০ তে পরিণত হয়।

জিপ রাইডারদের মতে মেক্সিকোর কপার ক্যানিয়নে অবস্থিত “Parque de Aventura Barrancas del Cobre” পৃথিবীর দীর্ঘতম জিপ লাইন যা ২৫৪৫ মিটার দীর্ঘ। নেপালের জিপফ্লাইয়ার পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর জিপ লাইন যার ভার্টিকাল ড্রপ ৬১০ মিটার এবং এটি ৫৬% বাঁকানো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন