শিরোনাম দেখে বাংলা ছবির গানের কথা মনে পড়লো ? গানটি শুনার সময় অনেকেই হয়তো ভেবেছো আকাশের ঠিকানায় আবার চিঠি লিখে কিভাবে…??
যদি বলি, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখা যায় এবং তুমি, আমি, আমরা সবাই প্রতিনিয়তই আকাশের কাছে চিঠি লিখছি।
আমরা এক দেশ থেকে আরেক দেশে ই-মেইল করি, মোবাইলে মেসেজ পাঠাই। ৫ সেকেন্ডও অপেক্ষা করতে হয় না। মুহূর্তেই চলে যায় ই-মেইল কিংবা মেসেজ। কিভাবে এটি হয় ভেবে দেখেছো ? মহাকাশে ভাসমান কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে এতো দ্রুত এই জিনিসগুলো আদান প্রদান হচ্ছে। মহাকাশে ৪০ টি দেশের প্রায় ১১’শ স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে।
এবার এসো দেখে নেই কিভাবে কাজ করে এই কৃত্রিম উপগ্রহঃ
কৃত্রিম উপগ্রহ এমনভাবে পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান হয় যেখানে Centrifugal Force কৃত্রিম উপগ্রহকে বাইরের দিকে গতি প্রদান করে কিন্তু পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি একে পৃথিবীর আওতার বাইরে যেতে দেয় না। উভয় শক্তি কৃত্রিম উপগ্রহকে ভারসাম্য প্রদান করে এবং কৃত্রিম উপগ্রহটি পৃথিবীর চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করে। কৃত্রিম উপগ্রহগুলো বৃত্তাকারে পরিক্রমণ করে না, তার গতি ডিম্বাকৃতির।
সাধারণত পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৬,০০০ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে এক একটি কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপন করা হয়। দুটি ভিন্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে এটি তথ্য আদান-প্রদান করে। একজনের পাঠানো বার্তাটি আপ-লিঙ্কের সাহায্যে স্যাটেলাইটে পৌঁছায়, এরপর অপর প্রান্তে যুক্ত GPS Navigator এর মাধ্যমে রিসিভার স্থান চিহ্নিত করে ডাউন-লিঙ্কের দ্বারা বার্তাটি প্রেরন করা হয়।
যদিও এত বেশি দূরত্বের কারণে কৃত্রিম উপগ্রহের সিগন্যাল খুব কম শক্তিসম্পন্ন হয়ে থাকে, এ কারণে ডিশ এন্টেনা ব্যবহার করে সবগুলো সিগন্যাল কেন্দ্রিভূত করা হয়। পরে রিসিভার দিয়ে সিগন্যাল গ্রহণ শেষে গন্তব্য অনুযায়ী পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এছাড়া, কৃত্রিম উপগ্রহের ব্যবহার নিচের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়।
- প্রাকৃতিক ভূগোল বিষয়ক ভূ-জরিপ
- আবহাওয়া সম্পর্কিত গবেষণা ও তথ্য প্রদান
- বেতার বা টেলিভিশনে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে রীলে স্টেশন হিসেবে কাজ করা
- মহাজাগতিক রশ্মি ও বিকিরণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ
- জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণা
- আন্তমহাদেশীয় যোগাযোগ
- বায়ুমণ্ডলের উঁচু স্তরের চাপ ও তাপমাত্রা নির্ণয়
- খেলাধুলা বা যে কোন ধরণের অনুষ্ঠান টেলিভিশনের মাধ্যমে দেখানো
- সামরিক তথ্য সংগ্রহ
এভাবেই আকাশের ঠিকানায় প্রতিদিন আমরা চিঠি পাঠাই, সেখান থেকে আবার তা পৌঁছে যায় আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্যে।