বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ সেকথা আমাদের সবারই জানা। বছরের কোনো সময় এখানে প্রচণ্ড গরম, কখনো কনকনে শীত , কখনো বা চলে অবিরাম বৃষ্টি। কীভাবে এই ঋতু পরিবর্তন ঘটে ? চলো, আজকে জেনে নিই ঋতু পরিবর্তনের রহস্য।
আমরা সবাই জানি, পৃথিবী গতিশীল। পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর একবার পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করতে সময় নেয় ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড বা ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ একদিন। পৃথিবীর এই আবর্তন গতিকে আহ্নিক গতি বলে ।
পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। একবার সূর্যকে পূর্ণ অতিক্রম করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড । পৃথিবীর এই গতিকে বার্ষিক গতি বলে ।
পৃথিবীর এই বার্ষিক গতির কারণে ঋতু পরিবর্তন হয়।
তোমরা হয়তো জানো যে , পৃথিবীকে ঠিক মাঝখান থেকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে একটি রেখার মাধ্যমে, যার নাম বিষুব রেখা। এই বিষুব রেখার একপাশের অংশকে বলা হয় দক্ষিণ গোলার্ধ, অন্যপাশকে বলা হয় উত্তর গোলার্ধ।
পৃথিবী যখন সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, তখন সূর্যের দিকে খানিকটা হেলে থাকে। পৃথিবী যেহেতু তার নিজ অক্ষেও ঘোরে, তাই বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে। এভাবে কখনো দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের কাছে চলে যায়, কখনো যায় উত্তর গোলার্ধ। যখন যে অংশ সূর্যের দিকে হেলে পড়ে তখন সে অংশ খাড়াভাবে বেশিক্ষণ ধরে সূর্যের আলো এবং তাপ পায়। আর তখন সেই অংশে বেশি গরম পড়ে, অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল থাকে।
একটা অংশ সূর্যের কাছে থাকা মানে তার উল্টো দিকের অংশটা থাকবে সূর্য থেকে দূরে। আর দূরে থাকলে কী হবে? সেই অংশটা কম তাপ এবং আলো পাবে। তখন সেই অংশে থাকবে শীতকাল।
পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে সূর্য পৃথিবীর যে গোলার্ধের নিকট অবস্থান করে সেই গোলার্ধে দিন বড় থাকে এবং রাত ছোট হয়। তাহলে বুঝতে পারছো যে, বিপরিত গোলার্ধে রাত বড় ও দিন ছোট থাকে। পৃথিবী দিনের বেলায় তাপ গ্রহণ করে বলে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয় ও রাতের বেলায় বিকিরণ করে বলে শীতল থাকে। যখন একটি স্থানে বড় দিনে যে তাপ গ্রহণ করে তা ছোট রাতে তাপ পুরোটা বিকিরণ করতে পারে না । তাই , স্বাভাবিকভাবেই আবহাওয়া উষ্ণ থাকে ও গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া দেখা যায় । বিপরীত গোলার্ধে রাত বড় ও দিন ছোট হওয়ার কারণে দিনের বেলায় যে তাপ গ্রহণ করে তা রাতের বেলায় সব তাপ বিকিরণ করে ঠাণ্ডা অনুভূত হয় ও শীতকালীন আবহাওয়া দেখা যায় ।
পৃথিবী গোল হওয়ার কারণে কোথাও সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে আবার কোথাও তির্যকভাবে পড়ে । এছাড়া , পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে সূর্যকিরণ বিভিন্ন স্থানে কম – বেশি পড়ার কারণে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার পার্থক্য ঘটে । ফলে জলবায়ুর বিভিন্নতা হয় ও ঋতু পরিবর্তিত হয় । তাপমাত্রা পার্থক্য আরেকটি কারণে ঘটে পৃথিবীর আবর্তন পথ উপবৃত্তাকার বলে । এর ফলে বছরের বিভিন্ন সময় সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব কম – বেশি হয় ।
বাংলাদেশে যখন গ্রীষ্মকাল থাকে, অস্ট্রেলিয়ায় তখন শীতকাল থাকে। আবার ওদের যখন গ্রীষ্ম থাকে, তখন আমাদের থাকে শীত। এবার বুঝেছ সেটা কেন হয়? কারণ অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ এবং বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধের দেশ। আর উত্তর গোলার্ধে যখন শীত থাকবে, দক্ষিণ গোলার্ধে থাকবে গরম। একইভাবে উত্তর গোলার্ধে গরম থাকলে দক্ষিণে থাকবে শীত।
আচ্ছা , যদি পৃথিবী সূর্যের চারপাশে না ঘুরতো, তবে তো সবসময় একটা দেশে একটাই ঋতু থাকতো। তখন কী হতো ? ‘তখন কী হতো’- একথা যেন আমাদের ভাবতে না হয় সেজন্যই পৃথিবী সারাক্ষণ সূর্যের চারপাশে এবং নিজের অক্ষে ঘুরে চলেছে। আর আমরাও পাচ্ছি ছয়টা ভিন্ন ভিন্ন ঋতু।