ওইমিয়াকন : বিশ্বের শীতলতম আবাসিক এলাকা

আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, সর্বনিম্ন কতো তাপমাত্রায় মানুষ বসবাস করতে পারে? এটা অনেকটাই নিশ্চিত আপনার উত্তরটি বাস্তবতার সাথে মিলবে না! আপনি কি কখনও ভাবতে পারেন যে এমন একটি জায়গাতে মানুষ বসবাস করে যেখানে চোখের পাতাও বরফে জমে যায়? সারাদিন গাড়ির ইঞ্জিন চালিয়ে রাখা হয় যাতে পুনরায় গাড়ি চালু করতে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে না হয়। অধিকাংশই এমনটা ভাববেন না!

তবে বাস্তবতা হলো, এমনই একটি গ্রাম আছে যেখানে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ঘটে থাকে। যেখানকার অধিবাসীরা সারাদিন কয়লা ও লাকড়ি জ্বালিয়ে ঘর গরম করে রাখে। তবে কোনও কারণে যদি বিদ্যুৎ চলে যায় এবং তা যদি পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে, তাহলে চরম বিপর্যয় সামনে আসে। কারণ এই সময়ের মধ্যেই পানির পাইপ জমে গিয়ে ফেটে যায়।

গ্রামটির নাম ওইমিয়াকন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম আবাসিক এলাকা। রাশিয়ার এই গ্রামটির তাপমাত্রা গড়ে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। গত সপ্তাহে গ্রামটির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় মাইনাস ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৯২৪ সালে মাইনাস ৭১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গ্রামটিতে মোবাইলের ব্যাটারি কাজ করে না। অন্যান্য ব্যাটারিগুলোও মোড়ক খোলার পরই নষ্ট হয়ে যায়। গ্রামটি ‘ঠান্ডা মেরু’ নামেও পরিচিত। গ্রামটিতে প্রায় ৫০০টি ঘর আছে।

এখানকার ঘরগুলোতে পানির পাইপ নেয়া অসম্ভব। কারণ মাটি সম্পূর্ণরূপে বরফে জমা। এখানে অনেকগুলো পাঁকা ঘরও আছে। তবে সবারই বাথরুম বাইরে। ঘর থেকে বাথরুমে পানি নেওয়াটাও কষ্টসাধ্য। মাটিতে জমে থাকা বরফের কারণে ওইমিয়াকনে মৃতদের সমাহিত করার আগে মাটি উষ্ণ করার জন্য বড় দাবানল তৈরি করা হয়।

বিখ্যাত অভিযাত্রী ও ফটোগ্রাফার অ্যামোস চ্যাপেল ওইমিয়াকন গ্রাম ও তার নিকটতম শহর রাশিয়ার ইয়াকুট অঞ্চলের রাজধানী ইয়াকুতস্ক ভ্রমণ করেন। প্রায় পাঁচ সপ্তাহ সেখানে থেকে সেখানকার আবহাওয়া ও মানুষের জীবনযাত্রার ওপর তথ্যচিত্র তৈরি করেন।

ইয়াকুতস্ক থেকে দুইদিনের যাত্রা শেষে ওইমিয়াকন গ্রামে যান তিনি। আর৫০৪ কলিমা হাইওয়ে দিয়ে তিনি যান। এই রাস্তাটি তৈরিতে অধিক সংখ্যক প্রাণহানী ঘটায় রাস্তাটিকে ‘রোড অব বোনস’ নামেও অভিহিত করা হয়।

চ্যাপেল জানান, এখানকার মানুষ রাসকি চা, যা আক্ষরিক অর্থে রাশিয়ান চা পান করেন। তবে এটি ভদকার মতোই। ওইমিয়াকনের প্রবেশ পথেই কমিউনিস্ট যুগের স্মৃতিস্তম্ভ চোখে পড়বে। এখানে মাত্র একটি স্কুল ও একটি দোকান আছে। উচ্চতর পড়াশোনার পাশের শহরে যেতে হয় তাদের।

গ্রামটিতে যেহেতু মাটি বরফে ঢাকা থাকে তাই কোনও চাষাবাদ হয় না। এখানকার লোকেরা পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা হিমায়িত কাঁচা মাছ, স্যালমন, রুপালি মাছ খায়। এছাড়াও তারা ঘোড়ার কলিজা খায়। মূলত তারা মাংসের স্যুপ খেয়েই বেঁচে থাকে।

গ্রীষ্মকালে এখানকার তাপমাত্রা অনেকটা সহনীয়। এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গরমকাল বেশিদিন স্থায়ী হয় না।

সূত্র : টেলিগ্রাফ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন