কৃত্রিম সমুদ্রে জাহাজের চুলচেরা বিশ্লেষণ

নতুন কোন যন্ত্র বা ঔষধ বাজারে ছাড়ার আগে বিজ্ঞানী বা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বরাবরই এর উপর বিভিন্ন রকম পরীক্ষা চালিয়ে এর মান সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়। পরবর্তীতে শুরু হয় যন্ত্র বা ঔষুধের বাজারজাতকরণ । ঠিক তেমনি জাহাজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের জাহাজগুলোর উপর এমন চুলচেরা বিশ্লেষণ চালিয়ে থাকেন। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জাহাজকে সমুদ্রের উপযোগী করে গড়ে তোলা। প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে এই জাহাজগুলোর উপর পরীক্ষা কিভাবে চালানো হয়? মূলত জাহাজের এর কর্মক্ষমতা বা কর্মদক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয় তো আর সমুদ্রে ছাড়া যাবে না !!


জাহাজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এক অভিনব উপায়ে এ পরীক্ষা চালায় । প্রথমে জাহাজ অনুযায়ী একটি মডেল জাহাজ তৈরী করা হয় । এরপর জাহাজটিকে ছেঁড়ে দেয়া হয় এক ট্যাংক বা কৃত্রিম জলাশয়ের মধ্যে এবং এরপর চলে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ। এ ধরণের কৃত্রিম জলাশয়গুলোকে বলা হয় "Ship model basin" । মডেল জাহাজটিকে প্রায় সমুদ্রের মত প্রতিকূল এক পরিবেশের সম্মুখীন করা হয় । এই কৃত্রিম জলাশয়গুলোকে দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ কৃত্রিম সমুদ্র বললেও যে খুব একটা ভুল হবে তা কিন্তু না !

রেপ্লিকা জাহাজগুলো কে এখানে ছেড়ে দিয়ে জাহাজ এর উপর "Hydrodynamicপরীক্ষাসমুহ করা হয় । জাহাজের ত্রুটিসমূহ খুঁজে বের করা, নতুন মডেল এর কার্যকারীতা , মডেল সংশোধন এবং জাহাজের যান্ত্রিক কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্নরকম পরীক্ষা চালানো হয় ।

১৮৬০ সালের দিকে বিজ্ঞানী William Froude মালবাহী জাহাজের আকারের অনুপাত অনুসারে ছোট আকারের মডেল জাহাজ তৈরি করে প্রথম পরীক্ষা করেন। সে হিসাবে William Froude কে এই পদ্ধতির জনক বলা চলে । এরপর, বিভিন্ন আগ্রহী প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের মাধ্যমে এই Basin এর বাণিজ্যিকরূপ দান করে ।

ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষার জন্য রয়েছে ভিন্ন ধরনের বেসিন Basin  যেমন – Deep Water Basin , Shallow Water Basin , Cavitation Tunnel, Towing TankSeakeeping and Maneuvering Basin , Offshore Basin , High-speed Basin।

Towing tank পদ্ধতির সাহায্যে জাহাজের বিভিন্ন ধরনের হাইড্রোডাইনামিক বৈশিষ্ট্যের পরীক্ষা করা হয়। এই সকল পরীক্ষা হতে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ কাজে লাগানো হয় ঐ জাহাজের নকশা প্রণয়ন বা পরিমার্জনের ক্ষেত্রে। Cavitation tunnel থেকে জাহাজের প্রপেলারের বৈশিষ্ট্য নিরীক্ষা করা হয়, Seakeeping and maneuvering বেসিন থেকে ধারণা পাওয়া যায় জাহাজ ও সমুদ্রের ঢেউয়ের মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে।

এছাড়া, অন্যান্য পদ্ধতিগুলোতে জাহাজের গতি বা কম পানিতে জাহাজের দক্ষতা বা জাহাজের চাপ নেয়ার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয় ! এই পদ্ধতির সাহায্যে জাহাজের ভার পরিবহন ক্ষমতা সম্পর্কেও খুব ভালো ধারণা পাওয়া যায়। এমনকি জাহাজের সূক্ষ্ম ত্রুটিগুলো ও ধরা পরে। এই বেসিনগুলোর উন্নতিতে শুরুর দিকে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ইউরোপের সমুদ্রবেষ্টিত দেশগুলো ।

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন