একজন ক্রিকেট খেলোয়াড় সম্পর্কে যাচাই করতে হলে কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ? তার ব্যাটিং বা বোলিং গড় নাকি তার স্ট্রাইক রেট ?
ক্রিকেট খেলায় একজন খেলোয়াড়ের ব্যাটিং গড় তার সর্বমোট রানকে কতবার সে আউট হয়েছে তা দিয়ে ভাগ করে নির্ণয় করা হয়। ব্যাটিং গড় একজন ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত পর্যায়ে অন্যতম প্রধান মাপকাঠি। কেননা ব্যাটিং গড়ের মাধ্যমে একজন ব্যাটসম্যান কত ভালো ব্যাট করে তা বুঝা যায়। যদিও টি টুয়েন্টি ক্রিকেটে গড়ের চেয়ে স্ট্রাইক রেট বেশী প্রাধান্য পায়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিকাংশ স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে ব্যাটিং গড় ৩০ থেকে ৪০-এর মধ্যে থাকে। বর্তমান যুগে খেলোয়াড়দের ব্যাটিংয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি তাদের ব্যাটিং গড় বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাটিংয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি এই জন্যই বলছি যে বর্তমানে ওয়ানডে ক্রিকেটে ইনিংসে অহরহ ৩০০-৩৫০ রান হয়। ৩০০-৩৫০ রান আগে মনে করা হতো পর্বতসম রান। খেলোয়াড়দের গড় ৫০ এর ঊর্ধ্বে থাকা মানে ঐ ব্যাটসম্যান আসলেই জিনিয়াস। তবে একটা কথা সত্য যে একজন ব্যাটসম্যান তার ক্যারিয়ারের শুরুতে খুব ভালোভাবেই শুরু করে কিন্তু আস্তে আস্তে দিন যতই যায় সে যদি ব্যাটিং এ ধারাবাহিকতা না ধরে রাখতে পারে তাহলে তার ব্যাটিং গড় কমে যাবে। ধরি একজন ব্যাটসম্যান তার প্রথম ম্যাচে করলো ৫০ রান কিন্তু পরবর্তী ম্যাচে কোন রানই করতে পারলো না। তাহলে দেখো প্রথম শেষে তার ব্যাটিং গড় ৫০ কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচ শেষে তা হয়ে গেলো ২৫। আমি তো শুধু দুইটা ম্যাচের কথা বললাম কিন্তু একজন ব্যাটসম্যান তো শুধু দুইটা ম্যাচ খেলে না ! তো ব্যাটসম্যান যতো ম্যাচ খেলবে তাকে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। ধারাবাহিকতার অভাব মানে ব্যাটিং গড় কমে যাওয়া। ব্যাটিং গড় কমে গেলে তা যে আর বাড়বে না এই কথাটা সত্য নয়। তবে তখন গড় বাড়াতে হলে ব্যাটসম্যানের ভালো কিছু ইনিংস খেলা জরুরী হয়ে পড়ে।
Test Cricket : Batting
সূত্র – ESPN cricinfo
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ক্যারিয়ারের বেস্ট ব্যাটিং গড় হচ্ছে কিংবদন্তী স্যার ডোনাল্ড ব্রাডম্যানের। তার ব্যাটিং গড় ছিলো ৯৯.৯৪। তার সর্বশেষ ইনিংসে তিনি শূন্য রান করেছিলেন বলে তার গড় ১০০ হয়নি ! আমাদের জন্য গর্বের বিষয় এই যে এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের মমিনুল হক। তার ব্যাটিং গড় টেস্টে ৬৩.০৫। তবে মমিনুল টেস্ট খেলছেন ২০১৩ সাল থেকে অর্থাৎ দুই বছর। তাই, সামনের দিন গুলোতেও তার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করতে পারি আমরা। যদি তিনি ধারাবাহিক না থাকেন তার গড় ৬৩.০৫ এর নিচে নেমে যাবে।
One-Day Cricket : Batting
সূত্র – ESPN cricinfo
ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশী ব্যাটিং গড় নেদারল্যান্ডের রায়ান টেন ডয়েসকাটের ( ৬৭.০০ ) ও দ্বিতীয়তে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলার ( ৫৬.১৩) আর তৃতীয়তে অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল বেভান ( ৫৩.৫৮ ) । মাইকেল বেভান বা মহেন্দ্র সিং ধোনী এদের ম্যাচ উইনার ফিনিশার হিসেবে বলা হয়। ধোনীর গড় ৫২.৬৭ মানে এই নয় যে সে প্রতি ম্যাচে ৫২ রান করেছে। তার গড় বাড়ার মূল কারণ হচ্ছে সে প্রচুর ম্যাচে ২০-৩০ রান করে অপরাজিত থেকেছে। যেহেতু সে আউট হচ্ছে খুব কম এই জন্য তার ব্যাটিং গড়ে কোন সমস্যা হচ্ছে না।
মাইকেল বেভান তার শেষ ১২ ইনিংসে রান করেছে যথাক্রমে ১,৩,৭,৪১*,১২,৭৫*,৫৬,২১,২৪,১০,১৪ ও ১৪। দেখা যাচ্ছে এই ১২ ইনিংসের মধ্যে তার গড়ের উপরে রান করেছে ২ ম্যাচে। শেষ ১২ ইনিংসে প্রত্যাশা মতো রান করতে না পারায় তার ক্যারিয়ারের যবনিকা ঘটেছে এতো ভাল গড় থাকা সত্ত্বেও।
বাংলাদেশের মাহমুদল্লাহ রিয়াদের কথায় ধরো। সে এবারের বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচে রান করেছে ৩৪৪। কিন্তু একটি ম্যাচে সে অপরাজিত ছিলো ১২৮ রানে। তাই, যখন তার গড় হিসেব করা হবে তখন তার মোট রান ভাগ হবে ৪ দিয়ে, ৫ দিয়ে নয়। তার গড় এই বিশ্বকাপে ৮৬.০০।
ব্যাটসম্যানর যে শুধু গড় তা কিন্তু নয় বোলারদের ও গড় আছে। বোলিং গড় হল এক প্রকারের পরিসংখ্যান, যা দিয়ে ক্রিকেট খেলায় একজন বোলারের বোলিং স্বচ্ছলতা যাচাই করা হয়। এটা প্রতি উইকেটে কত রান দেওয়া হয়েছে তার অনুপাত। অর্থাৎ, একজন বোলার কত ভালো বোলিং করছে তা বলা যাবে তার বোলিং গড় যত কম হবে তার ভিত্তিতে। একজন বোলার একটি উইকেট পেতে গড়ে কয়টি বল করেছে তাই হচ্ছে বোলারের স্ট্রাইকরেট।
One-Day Cricket : Bowling
সূত্র – ESPN cricinfo
ওয়ানডেতে সবচেয়ে ভালো বোলিং গড় অস্ট্রেলিয়ার মিশেল স্টার্কের ( ১৮.৬২ ) ও দ্বিতীয়তে রয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জোয়েল গার্নারের ( ১৮.৮৪) । আর টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের জর্জ লেহমানের রয়েছে ১০.৭৫ রেটের সর্বনিম্ন ও সেরা বোলিং গড়।