খেলার নাম পিং পং

বিশ্বের জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে টেনিস অন্যতম একটি খেলা। টেনিসেরই ঘরোয়া ভার্সন হচ্ছে টেবিল টেনিস, এটি পিং পং নামেও পরিচিত। অল্প জায়গায় শারীরিক পরিশ্রমের খেলাগুলোর মধ্যে এটি বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশী খেলা না হয়ে থাকলেও দিন দিন বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এমনকি এখন প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কমনরুমের জনপ্রিয় খেলা টেবিল টেনিস। ১৮৮০ সালে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে টেবিল টেনিস খেলার গোড়াপত্তন হয়। ইংল্যান্ডে যখন খেলাটির উদ্ভব হয় তখন খেলাটিকে অভিজাত খেলা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ১৯৮৮ সালে টেবিল টেনিস খেলা সিউল অলিম্পিকে স্থান পায়। ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস ফেডারেশন বা ITTF ( International Table Tennis Federation )।

টেবিল টেনিস খেলার উপকরণগুলো হল-

বলঃ ৪০ মিঃ মিঃ ব্যাসার্ধের এবং ২.৭ গ্রাম ওজনের একটি বল দিয়ে টেবিল টেনিস খেলা হয়। বলটি প্লাস্টিকের তৈরি হতে হবে এবং এমন হতে হবে যেন ৩০.৫ সেঃ মিঃ উচ্চতা থেকে ফেললে ২৪-২৬ সেঃ মিঃ উচ্চতায় বাউন্স খাবে। যদিও বলের রঙ সাদা বা কমলা হওয়ার কথা, তবে টেবিলের রঙের ওপর নির্ভর করে এখন বিভিন্ন রঙের বল ব্যবহার করা হয়।

টেবিলঃ খেলার নামই যখন টেবিল টেনিস, তখন বোঝাই যাচ্ছে যে টেবিল হল এই খেলার প্রয়োজনীয় একটি উপকরণ। তবে পড়ার টেবিলে কিংবা খাবার টেবিলের দুই পাশে দাঁড়িয়ে টেবিল টেনিস খেললে চলবে না। কারণ নামে টেবিল হলেও এই টেবিলের ধরণ আলাদা। টেবিল টেনিসের টেবিল ৯ ফিট লম্বা এবং ৫ ফিট চওড়া হয়ে থাকে। এর উচ্চতা হতে হয় ২.৫ ফিট। টেবিলের উপরের অংশ ম্যাসোনাইট নামক শক্ত এবং মসৃণ কাঠজাতীয় বোর্ড দিয়ে তৈরি। টেবিলের ঠিক মাঝখানে ৬ ইঞ্চি উঁচু একটি জাল খাটিয়ে রাখা হয়।

ব্যাটঃ টেবিল টেনিসের ব্যাটগুলো দেখতে বেশ সুন্দর। এই ব্যাটকে প্যাডেল বা র‍্যাকেট নামেও অভিহিত করা হয়। ৩ ইঞ্চি হাতল এবং ৩.২৫ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের গোলাকার অংশযুক্ত ব্যাটগুলো দিয়ে টেবিল টেনিস খেলা হয়।

টেবিল টেনিস দুইজন বা চারজন মিলে খেলা যায়। ব্যাটের হাতলে ধরে বলটিকে ব্যাটের গোলাকার অংশ দিয়ে আঘাত করে টেবিলের অপর প্রান্তে পাঠাতে হয়। আবার ঐ পাশ থেকে প্রতিপক্ষ একইভাবে এই পাশে পাঠায়। এইভাবে আঘাত করতে করতে যে খেলোয়াড় বলটিকে আঘাত করতে ব্যর্থ হন, তার প্রতিপক্ষ পয়েন্ট পেয়ে থাকেন।

প্রতিপক্ষকে মিস করানোর জন্য খেলোয়াড়রা বিভিন্ন স্টাইলে বল মেরে থাকেন। খেলার কৌশলের মধ্যে আক্রমণাত্মক এবং প্রতিরক্ষামূলক কৌশলে খেলোয়াড়রা বলে হিট করে থাকেন।  স্পিড ড্রাইভ, লুপ, কাউন্টার-ড্রাইভ, ফ্লিক, স্ম্যাশ ইত্যাদি আক্রমণাত্মক হিটের মধ্যে পড়ে। পুশ, চপ, ব্লক, লব ইত্যাদি হল রক্ষণাত্মক কৌশলের অংশ।

টেবিল টেনিস খেলায় যেমনভাবে খুশি বল মারলেই হয় না, এর নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। খেলার শুরুর আঘাতটিকে সার্ভ বলে। সার্ভ করার সময় বলটিকে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি ওপর থেকে মারতে হয়। বলে আঘাত করার পর সেটি নিজের অংশে একবার বাউন্স খেয়ে তারপর প্রতিপক্ষের অংশে যেতে হয়। কোন খেলোয়াড় তার প্রতিপক্ষকে হারাতে হলে এমনভাবে বলটিকে মারতে হবে যেন বলটি প্রতিপক্ষের দিকে বাউন্স খেয়ে সোজা চলে যায়।

আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস খেলায় ম্যাচ সাধারণত ৫/৭ সেটের হয়ে থাকে। প্রত্যেক সেট জিততে হলে প্রতিযোগীকে ১১ পয়েন্ট অর্জন করতে হয়।

আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস খেলায় চীন এককভাবে রাজত্ব করে চলছে। সর্বশেষ র‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী, পুরুষদের বিভাগে প্রথম চারটি ও মেয়েদের বিভাগে প্রথম তিনটি অবস্থানই হচ্ছে চীনের দখলে। বর্তমানে পুরুষদের বিভাগে প্রথম অবস্থান মা লং ও মেয়েদের বিভাগে প্রথম অবস্থান দিং নিং এর দখলে।

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন