গুর্খাদের ঐতিহ্যের বাহক কুকরি

প্রবাদ আছে “If a man says he is not afraid of dying, he is either lying or is a Gurkha”। এই গুর্খারা ১৮ ইঞ্চি লম্বা একটা বিশেষ ছুরি ব্যবহার করে যার নাম “কুকরি”। এই ছুরি নিয়ে প্রবাদ আছে, বিবাদ বা ঝামেলার সময় এই ছুরি খাপ থেকে বের করা হলে একে রক্ত পান করাতে হবে। না হলে গুর্খারা নিজের গা কেটে একে রক্ত পান করাতো। 

গুর্খা রেজিমেন্ট সারা বিশ্বের সৈন্য বাহিনীর মধ্যে সাহসিকতা ও যুদ্ধ কৌশলে পারদর্শিতার জন্য এক নামে পরিচিত। গুর্খা সৈন্যদের এই রেজিমেন্ট তৈরি করেছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ১৮১৬ সালে। ১৯৪৭ সালে এই রেজিমেন্ট ছিল ১০টি। এই রেজিমেন্টে নিয়োগ করা হতো শুধু নেপালিদের। নেপালে অসংখ্য উপজাতি রয়েছে। বর্তমান অসংখ্য উপজাতির মধ্যে মাত্র ৬টি উপজাতির লোকদের প্রাধান্য দেয়া হতো সৈন্য হিসেবে নিয়োগে। এরা হলো গুরুঙ, মগর, তামাং, সুনুয়ার, লিম্বু, রাই। সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হতো গুরুঙ ও মগরদের। এদের দিয়ে গুর্খা রেজিমেন্ট তৈরি হয়েছিল এবং এখনো হয়। গুর্খা রেজিমেন্টের সৈন্যদের বলা হয় গুর্খা সেনা সংক্ষেপে বলা হয় ‘গুর্খা’। জীবিকার প্রয়োজনে বা অন্য কারণে নিজেদের ‘গুর্খা’ বলে আবার ‘নেপালি’ও বলে। ‘গুর্খা’ কোনো জাতি নয়। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সময় ১০টি ‘গুর্খা রেজিমেন্ট’-এর ৬টি চলে আসে ভারতের নিয়ন্ত্রণে, ৪টি চলে যায় ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে। গুর্খারা যে বিশেষ ছুরি ব্যবহার করে তার নাম কুকরি।  

৪০-৪৫ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য এবং প্রায় ৪৫০-৯০০ গ্রাম (১-২ পাউন্ড) ওজনের এই ছুরিটির প্রাপ্তিস্থান হচ্ছে নেপাল ও দক্ষিণ এশিয়ার কিছু প্রতিবেশী দেশে। দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে এই ছুরি পাওয়া গেলেও এটি সাধারণত নেপালি ছুরি হিসেবে বেশি পরিচিত। নেপালের আর্মি বাহিনীকে বিশেষভাবে এই ছুরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, এছাড়া নেপালের পুলিশ কর্মকর্তারা আত্মরক্ষার জন্য এই ছুরি ব্যবহার করে থাকে। শুধু আত্মরক্ষার কাজেই নয়, নেপালিরা তাদের বিভিন্ন ঐতিহ্যগত ধর্মানুষ্ঠান ও বিয়েতে এই কুকরি ছুরি ব্যবহার করে থাকে। এই কুকরি ছুরি গুর্খাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে ধারণ করে। 

ইতিহাসে বলা আছে সে আলেকজেন্ডার দি গ্রেট এর হাত ধরে এই Kukri ছুরি প্রথম এশিয়াতে পদার্পণ করে। সে সময় প্রথম আলেকজেন্ডার দি গ্রেট যুদ্ধে এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। পরে আরও বিভিন্ন যুদ্ধে এই Kukri ছুরির ব্যবহার লক্ষণীয়। ১৮১৪-১৮১৬ সালে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গুর্খা রাজ্যের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে তখন তাদের মধ্যে গুর্খা যুদ্ধ হয় তখন ঐ যুদ্ধে Kukri ছুরির ব্যবহারের তথ্য আইরিশ লেখক আব্রাহাম ব্রাম স্টোকার এর উপন্যাস ড্রাকুলা (1897) থেকে জানা যায়। এছাড়া, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই অস্ত্র মিত্র বাহিনী এবং শত্রু বাহিনী উভয়েরই ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া গেছে। 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন