গ্রীনহাউস ইফেক্ট

খুব বেশী আগের কথা নয়, এই কয়েক বছর আগেও শীত এলেই চারিদিকে একটা সাজ সাজ রব পড়ে যেতো, ইয়া মোটা মোটা জ্যাকেট, সোয়েটার পড়ে বাচ্চারা স্কুলে যেতো। কিন্তু এখন আর শীতকাল এলেও তেমন একটা শীত পড়ে না, বরং মাঝে মাঝে শীতকাল এসেছে বলে মনে হয় না। এর কারণ হলো , গ্রীনহাউস ইফেক্ট, যার ফলে পৃথিবীর সার্বিক তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গ্রীনহাউস ইফেক্টের কথা তোমরা সবাই মোটামুটি জানো। গ্রীনহাউস বলতে আসলে বোঝানো হয় একটি কাঁচের ঘরকে, যেটিকে শীতপ্রধান দেশে শাকসবজি উৎপাদন করতে বা উদ্ভিদকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যবহার করা হয়। কাঁচের ঘরে সূর্যের আলোর সাথে তাপ ভেতরে প্রবেশ করে, কিন্তু কাঁচ ভেদ করে বাইরে যেতে পারে না। এর ফলে ঘরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং সেখানে উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় তাপ সংগ্রহ করতে পারে। শীতপ্রধান দেশে বেশীরভাগ সময়েই প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকে বলে এই কাঁচের ঘর ব্যবহার করা হয়।

পৃথিবীর বায়ুমন্ডলও পৃথিবীকে এমন এক কাঁচের ঘরের মতো করে তুলেছে, যার ফলে সূর্যের আলোর সাথে তাপ পৃথিবীতে এসে পৌঁছানোর পর তা আর ফিরে যেতে পারে না। আর তাই এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে বলা হচ্ছে গ্রীনহাউস ইফেক্ট ( Greenhouse Effect ) 

গ্রীনহাউস ইফেক্টের জন্য সর্বপ্রথম দায়ী কার্বন-ডাই-অক্সাইড। আমরা নিঃশ্বাসের সাথে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করছি, আবার উদ্ভিদ তা গ্রহণ করছে। কলকারখানা, গাড়ির ধোঁয়া থেকেও কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। অতিরিক্ত পরিমাণে গাছ কেটে ফেলার ফলে ( Deforestation )  এই গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে জমা হচ্ছে। এই অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড জমা হওয়ার ফলে পৃথিবীর সার্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর নামে একটি স্তর আছে, যেটি সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মিকে ( Ultraviolet Ray )  পৃথিবীতে আসতে বাধা দেয়। রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসর ( Compreesor ) থেকে, এরোসলের কৌটা তৈরিতে এবং ফোম তৈরিতে উৎপন্ন হয় CFC বা ফ্রেয়ন, রাসায়নিক নাম ক্লোরোফ্লুরো কার্বন। এই গ্যাস ওজোন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্থ করে, যার ফলে অতিবেগুনী রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। অবশ্য এখন CFC-র ক্ষতিকর দিক অনুধাবিত হওয়ায় এর ব্যবহার অনেকটাই কমেছে।

রান্নার কাজে কিংবা CNG হিসেবে মিথেন গ্যাস ব্যবহার করা হয়। প্রতিবছর এই মিথেন গ্যাস বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত হয়ে বায়ুমণ্ডলে জমা হয় এবং গ্রীনহাউস ইফেক্ট সৃষ্টি করে। এছাড়া নাইট্রাস অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প গ্রীন হাউস ইফেক্টকে  ত্বরান্বিত করে।

এমনকি পৃথিবী নিজেও গ্রীনহাউস ইফেক্টের জন্য খানিকটা দায়ী। চমকে যাবার মতো ব্যাপার নিশ্চয়ই! 

ওজোন স্তর যেমন আমাদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে, তেমনি কিছুটা ক্ষতিও করে। পৃথিবীতে উৎপাদিত তাপ ওজোন স্তরের কারণেই পৃথিবীর বাইরে যেতে পারে না। পৃথিবীর দুই অঞ্চলের দুই মেরু সারা বছর বরফে ঢাকা থাকে, অর্থাৎ এরা সবচেয়ে ঠাণ্ডা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এরাও পৃথিবীকে উত্তপ্ত করতে দায়ী। দুই মেরুর বরফে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে দ্বিগুণ তাপ উৎপন্ন হয়, আবার এই তাপ ওজোন স্তরে ধাক্কা খেয়ে পৃথিবীতেই ফিরে আসে।

মোটকথা, গ্রীনহাউস ইফেক্ট একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, সুতরাং এটি চলতেই থাকবে। এক্ষেত্রে আমাদের যা করণীয় তা হলো, নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করা। উদ্ভিদ আবহাওয়া ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে গ্রীনহাউস ইফেক্ট এতটা দ্রুত সংঘটিত হবে না, কিংবা অনেকটাই সংযত থাকবে। 

 

চলো নিচের ভিডিও দুইটিতে গ্রীনহাউস ইফেক্ট সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেই ।  

              

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন